অন্ধ বৃদ্ধের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো শিক্ষার্থীদের সংগঠন

যশোরের মনিরামপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের হাকোবা গ্রামের বাসিন্দা অশোক কুন্ড। সবার কাছে তিনি পরিচিত একজন অন্ধ মুদী দোকানী হিসেবে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সাথে নিয়ে এই কাজ করা মোটেই সহজ নয়। পরিবারের মুখে হাসি ধরে রাখতে তিনি সর্বদা চেষ্টা করছেন। তার আয়ের উৎস স্কুলের পাশে ছোট্ট মুদি দোকানটি। অভাবের সংসার, অর্থের টানাটানি, মুদি মালের দাম বৃদ্ধি সবমিলিয়ে অর্থ সংকটে পরিবারের এ হাসি মলিন হতে বসেছিল।

তার এই কষ্টের জীবনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ঐক্য-বন্ধন ও এফসিবিএফ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অশোক কুন্ডের সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন সংগঠনটি।

অর্থিক সাহায্যর আবেদন চেয়ে বলা হয়, “ছবিতে যে লোকটিকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি অশোক কুন্ড। দু’চোখ অন্ধ। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে একটি প্রাইমারি স্কুলের পাশে ছোট মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অভাব-অনাটনের সংসার আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুদি দ্রব্য নেই। ফ্রেন্ড সার্কেল ব্লাড ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা সকলে মিলে তার দোকানে কিছু মালামাল কিনে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছি। আপনার সামান্য সাহায্য অন্ধ বৃদ্ধের জীবীকা নির্বাহে বেশ অবদান রাখবে”

ভাইরাল হয়েছে তাদের এই পোস্ট। তদের এই পোস্ট দেখে সাহায্যর আবেদনে এগিয়ে এসেছে মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের ছেলে আসিফ খান অভি। নতুন দোকান ও দোকানের জিনিসপত্র কিনে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। অভির এমন ব্যতিক্রম ও মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা।

সোমবার (২২ আগস্ট) নতুন দোকান ও মালামাল কিনে ওই অন্ধ বৃদ্ধের দোকানটি সাজিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বৃদ্ধ অশোক কুন্ড গরীব মানুষ। অন্ধ হওয়ার কারণে কোন কাজ করতে পারে না। দোকানের উপর নির্ভর করে সংসার চললেও তাতে এখন ভাটা পড়ে গেছে। পরে শুনলাম
ঐক্য-বন্ধন, এফসিবিএফ ও অভির সহযোগিতায়
তাকে নতুন দোকান করে দেওয়া হয়েছে ও মালামাল তুলে দিয়েছে। অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালায়। কিন্তু বৃদ্ধ এদিক থেকে ব্যতিক্রম, তিনি নিজে পরিশ্রম করতে চায়। সমাজের বিত্তবানরা যদি এসব অসহায়দের সহযোগিতা করেন তাহলে অনেকের কর্মসংস্থান হতো।

বৃদ্ধ অশোক কুন্ড জানান, তার এক ছেলে, দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েগেছে। ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। আমি অন্ধ, কোন কাজ করতে পারি না। এই দোকানের উপর নির্ভর করে ও সমাজের বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় সংসার চলে যায়। সত্য ও নিষ্ঠার সাথে বেচাকেনার করি। অন্ধ বলে যারা মালামাল নিতে আসে তারা আমাকে সহযোগিতা করে।

তিনি বলেন, অভি ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় নতুন দোকান ও বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন রকম মালামাল পেয়েছি। এতে আমি অনেক খুশি। ওদের জন্য অনেক দোয়া রইল, যেন সুস্থ সবল থাকে। তদের মানবতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

মাহমুদ হাসান বলেন, অভি ভাইয়ের মত যদি সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা মানবিক কাজে এগিয়ে আসে তাহলে আমরা ভালো কাজে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় । আমরা চাই একটু সাহায্য ও সহযোগিতা। আমরা তরুণরা একদিন সব কিছু পরিবর্তন করব। ভাল কাজে আমাদের ভূমিকা থাকবে অগ্রনী।

আসিফ খান অভি বলেন, অশোক কুন্ড ভিক্ষাবৃত্তি না করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছেন। অর্থিক সমস্যার কারণে দোকানের মালামাল কিনতে পাচ্ছিলেন না। বিষয়টি জানার পর তার পাশে দাঁড়িয়েছি। তিনি যেন সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস ও বাঁচতে পারেন এজন্য আমার তরফ থেকে ক্ষুদ্র একটা উদ্যোগ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *