ছোট বেলায় তার স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে। কিন্তু পড়াশোনায় তিনি উন্নতি করতে পারেননি। স্কুল শিক্ষা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর না এগোলেও আমৃত্যু তিনি জ্ঞান আহরণে ব্রতী ছিলেন। এ হিসেবে তাকে একজন স্বশিক্ষিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করা যায়। স্কুল ত্যাগের পর অক্ষয়কুমার দিল্লি অ্যান্ড লন্ডন ব্যাংকের হিসাব বিভাগের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে কয়েক বছর চাকরি করার পর নর্থ ব্রিটিশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে হিসাব সচিব পদে যোগ দেন। এই পদ থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
হেয়ার স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বিহারীলাল চক্রবর্তী ছিলেন বাংলা ’গীতিকবিতার’ প্রবর্তক। তারই অণুপ্রেরণায় কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন বড়াল।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অক্ষয়কুমার বড়ালকে “বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য” নামে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে তিনি বড়াল কবি নামে পরিচিত। তার কাব্য রচনার মূল বিষয় ছিল নিসর্গ, সৌন্দর্যবাদ, কল্পনামূলক প্রেম, শোক এবং মানববন্দনা। নারীপ্রেমের শান্তরস তার কাব্যের প্রধান বিশেষত্ব। তিনি মৃতা স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করে “এষা” কাব্যগ্রন্থটি লিখেছিলেন। মার্জিত এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন তিনি।সুকুমার সেন এর মতে, ছন্দের চাতুর্যের দিকে বেশি ঝোঁক না থাকায় ভাবের প্রকাশ অকুন্ঠিত হয়েছে। তবে ভাবাবেগের তীব্রতায় কবি ভাষার উপর সর্বত্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে পারেন নি।
‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার ১২৮৯ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ‘রজনীর মৃত্য’ প্রকাশিত হয়। কবি বড়ালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো প্রদীপ (১৮৮৪), কনকাঞ্জলি (১৮৮৫), ভুল (১৮৮৭), শঙ্খ (১৯১০)’ এষা (১৯১২) প্রভৃতি। কবির অসম্পূর্ণ নাম ‘চণ্ডীদাস’ (১৯১৭)। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে আছে কবি রাজকৃষ্ণ রায়ের কবিতা (১৮৮৭), গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর অশ্রুমালা (১৮৮৭) প্রভৃতি।
১৯ জুন ১৯১৯ সালে তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।