আজ ‘নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস’

শিপন নাথ: আজ ১৩ জুন ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিং হলো একটি সামাজিক ব্যাধি আর বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতি বছর বখাটেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়

ইভটিজিং বিষয়টা ৬০-এর দশকে বেশি মনোযোগ পায় গণমাধ্যমে; যে সময়টাতে অধিকসংখ্যক মেয়ে বিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে যেতে থাকে পুরুষের সাহচর্য ছাড়াই। এই অবস্থায় প্রশাসন ইভটিজারদের ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। এ-ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশের প্রয়োগ ফলপ্রসূ হয়। বিভিন্ন শহরে মহিলা পুলিশের বিশেষ স্টেশন, মহিলাদের জন্য হেল্পলাইন চালু ও পুলিশের মাঝে ইভটিজিংবিরোধী সেল গঠন করা হয়। এ সময়ে প্রচুর অভিযোগ আসতে থাকে ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে। এর পরেও ইভটিজিংয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকে। একসময় তা পৌঁছে যায় অ্যাসিড সন্ত্রাস পর্যন্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

কোনো নারী, যুবতী, কিশোরী বা মেয়ে শিশুকে তার স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধাদান, তার চলার পথে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা অবস্থায় অশ্লীল বা অশালীন মন্তব্য করা, যে-কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন, তার নাম ধরে ডাকা বা বিকৃত নামে তাকে সম্বোধন, চিৎকার চেঁচামেচি করা, তার দিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো কিছু ছুড়ে দেওয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন ধরনের মন্তব্য করা, যোগ্যতা নিয়ে টিটকারি করা, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাঁটতে বাধা দেওয়া, অশ্লীল বা অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেওয়া, সিগারেটের ধোঁয়া গায়ে ছোড়া, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে পিছু নেওয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা, উদ্দেশ্যেমূলকভাবে গান-ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথ রোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদি ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে। সাধারণত কিশোর মেয়ে, মেয়েশিশু, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রী, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারী শ্রমিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ সর্বস্তরের নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হন। এছাড়া গণপরিবহণে, বিশেষ করে বাস, ট্রেন, সিএনজি, অটোরিকশাতেও নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় ইভটিজিং সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাহাতে শুনিতে পায় এমনভাবে কোনো কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা সে নারী যাহাতে দেখিতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যে-কোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে কিংবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।’ ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতা নষ্ট করার অভিপ্রায়ে বা সে তা দ্বারা তার শালীনতা নষ্ট হতে পারে জেনেও তাকে আক্রমণ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে, তাহলে সে ব্যক্তি ২ বৎসর পর্যন্ত যে-কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’

ইভটিজিং বন্ধে করণীয়:

পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে-সব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন, সেসব কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীরা নারী সহকর্মীর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ইভটিজিংবিরোধী সভা, সমাবেশের আয়োজন করতে পারে। এতে জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা নিতে হবে। ইভটিজিং যে বা যারা করবে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বোপরি, ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কোনো ধরনের ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে সবাইকে ভিকটিমের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিকারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রত্যেক নারীর অধিকার রয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার। সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে নারীর পথচলা হবে নিরাপদ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *