ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে স্বর্ণের দাম

মহামারি করোনাসংকটের মধ্যেই বিশ্ববাজারে উত্তপ্ত স্বর্ণের দাম নিয়ে। দফায় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। এরই মধ্যে ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো এক হাজার ৯০০ ডলার স্পর্শ করেছে স্বর্ণের আউন্স। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর ছাড়া স্বর্ণের এত চড়া দাম আর কখনও দেখা যায়নি।

বিশ্ববাজারে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম নির্ধারণ হয় আউন্স হিসেবে। এক আউন্স স্বর্ণ ৩১ দশমিক ১০৩ গ্রামের সমান। গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৬৬০ ডলারে গিয়ে ঠেকে। তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এক ধাক্কায় প্রতি আউন্স এক হাজার ৪৬৯ ডলারে নেমে আসে।

এ পতন ঠেকিয়ে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি। মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণ এক হাজার ৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। এর পর থেকে স্বর্ণের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। তবে চলতি সপ্তাহে এর দাম যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। ইতোমধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে স্বর্ণের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।

নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দাম আগে কখনও এত ছিল না।

এদিকে বাজুস যখন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮৮৯ ডলার। আজ তা আরও বেড়ে এক হাজার ৯০২ ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ বাজুসের দাম বাড়ানোর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৩ ডলার বেড়ে গেছে।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৯২০ ডলারে উঠেছিল। এটাই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম। অর্থাৎ আর মাত্র ১৮ ডলার বাড়লেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে যাবে স্বর্ণ। চলতি সপ্তাহে স্বর্ণের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে যে-কোনো সময় স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮০৮ ডলার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার তা বেড়ে এক হাজার ৮২০ ডলার স্পর্শ করে। মঙ্গলবার তা আরও বেড়ে এক হাজার ৮৪২ ডলারে উঠে। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস বুধবার লেনদেনের এক পর্যায়ে এক হাজার ৮৬৫ ডলার পর্যন্ত উঠে স্বর্ণের দাম। এর মাধ্যমে ২০১১ সালের পর স্বর্ণের দাম আবার সাড়ে এক হাজার ৮০০ ডলার স্পর্শ করে।

তবে এখানেই স্বর্ণের দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে থাকেনি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দাম বেড়ে লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম এক হাজার ৮৯৫ ডলার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যদিও দিনের লেনদেন শেষে এক হাজার ৮৮৭ ডলারে থিতু হয় দাম।

আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবারও দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত ছিল। ইতোমধ্যে গতকালই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৫ ডলার বেড়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৪৪ দশমিক ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে।

ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, ‘২০১১ সাল ছাড়া স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির এমন প্রবণতা কখনও দেখা যায়নি। স্বর্ণের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে যে-কোনো সময় বিশ্ববাজারে এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন।’

তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি নেই। আমাদের দেশে স্বর্ণালংকার বেশি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্তরা। করোনার কারণে এই মধ্যবিত্ত এখন বড়ো সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া বয়স্করা এখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে, আমাদের বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমেছে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *