অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক খাত গত দুই বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক খাতে কোনো তারল্যসংকট নেই। এখন কেউ বলতে পারবে না, ব্যাংকে গিয়ে টাকা পায়নি, ফিরে এসেছে; কোনো রকম খারাপ ব্যবহার করেছে গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১২ জুন) বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। করোনার কারণে এ সংবাদ সম্মেলন অনলাইনে আয়োজন করা হয়।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ব্যাংকিং খাত দেখেছি। আমার আগে ব্যাংকের নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ বেশি ছিল। সে কারণে ব্যাংকগুলো মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করতাম, তাদের তারল্যের অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যেত। ইদানীং কোনো ব্যাংকের তারল্যসংকট, এ কথা শুনিনি।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ। বিশাল এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। চলতি (২০১৯-২০) বাজেটে যা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাত থেকে যে বাড়তি ঋণ সরকার নিচ্ছে, তাতে ব্যাংক খাত সংকটে পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও কোনো সমস্যা হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ হিসেবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
গভর্নর বলেন, চলতি অর্থবছরে ইতোমধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কোনও সমস্যা হয়নি। চলতি অর্থবছরে ৮২ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এতেও সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুন: বাজেটে কোভিড বাস্তবতার প্রতিফলন হয়নি : সিপিডি
ব্যাংক খাতে বর্তমানে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে দাবি করে গভর্নর বলেন, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি নগদ তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ রয়েছে আরও ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের তারল্য সমস্যা নেই, ঋণ নিলেও এ খাতের কোনও সমস্যা হবে না।
কনোরাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নেও কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে ফজলে কবির বলেন, ইতোমধ্যে প্রণোদনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রি-ফাইন্যান্স হিসাবে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে ৪০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সিআরআর (ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ) ছাড় দেওয়া হয়েছে এতে ১৮ হাজার কোটি টাকাসহ প্রায় মোট ৭২ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এতে করে প্রণোদনা বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না।
বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে গভর্নর বলেন, ১০ লাখ টাকার ওপরে ও এর চেয়ে বেশি যাদের আমানত আছে তাদের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে ১০ লাখ টাকার নিচে যাদের আমানত তাদের শুল্ক বাড়ানো হয়নি। আর এতে করে আমানতের কোনও সমস্যা হবে না। আগে সঞ্চয়পত্রের কারণে ব্যাংকে আমানতের চাপ কম ছিল, তাও এখন আর নেই।