গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নযোগ্য ‘গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক এ প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকার এমপিরা পাবেন ২০ কোটি টাকা করে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পটিসহ ৯ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
রবিবার (২১ জুন) গণভবন থেকে ভার্চুয়াল এ সভায় যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। একনেক সভা শেষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের সিটি করপোরেশন বহির্ভূত প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ২০ কোটি করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সড়ক উন্নয়ন, সড়ক পুনর্বাসন ও সড়কে ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে এ টাকা ব্যয় করা হবে।
কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে এ অর্থ ব্যয় করা যাবে বলে বৈঠক পরবর্তী ভিডিও কনফারেন্সে জানতে চাওয়া হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে এ ধরনের প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্যদের এ কার্যক্রমের বিষয়ে কঠোর তদারকি করা হবে। আমিসহ অনেকেই এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। তবে আমার বিশ্বাস সংসদ সদস্যরা এলাকার মানুষের উন্নয়নে এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, গতকালের একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, মাছ চাষের জন্য জলাশয়ের শুধু পাড় সংস্কার করলে হবে না, পানির ওপর ও নিচের আবর্জনাও পরিষ্কার করতে হবে। জলাশয়ের গভীরতাও সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। বালুমহালের স্থান চিহ্নিত করে সময়ে সময়ে পরিবর্তন করতে হবে। এতে নদীভাঙন কমবে। স্থানীয় সরকারের রাস্তাগুলো যথাযথ মান বজায় রেখে নির্মাণ করতে হবে। প্রত্যেক কারাগারেই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং রেলওয়ের কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে।
জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপিকে নিজ নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। এ প্রকল্প ২০১০ সালের মার্চে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে গৃহীত প্রকল্পে এমপিদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এর আগেই তৃতীয় মেয়াদে এমপিদের আবারো ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার খাতের যে কৌশলের বিষয় উল্লেখ করেছেন সেটির সঙ্গে এ ব্যয় মোটেও যৌক্তিকভাবে হয়নি। আবার এ সময়ে যখন রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে, তখন সাশ্রয়ের পথ খোঁজার প্রয়োজন ছিল, যাতে আর্থিক সংকট দেখা দিলে প্রয়োজনীয় খাতের অর্থ কমাতে না হয়। ফলে বাস্তবতার নিরিখে এটি বিপরীতমুখী হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া সরকারের কথা, বরাদ্দ ও কাজের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আগের অর্থায়ন কতটা কর্মসংস্থান বা প্রয়োজনীয়তা মিটিয়েছে, সেটির মূল্যায়ন না করে এ ধরনের অর্থ ব্যয় মহামারী চলাকালে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সংকটে ফেলতে পারে।
একনেকের গতকালের বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মত্স্য উৎপাদন বৃদ্ধি (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, মনু নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্প, বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা) (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, হাওড় অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প, জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন) (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ (হরিদাসপুর)-মোল্লাহাট (ঘোনাপাড়া) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প এবং যশোরে বিএএফও বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।