কক্সবাজারে করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে কর্মহীন, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী এবং কাঁচাবাজারের চাহিদা পূরণ করতে আজ ৩ জুন (বুধবার) কক্সবাজার জেলার রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (রামু স্টেডিয়াম) মাঠে তৃতীয়বারের মতো আবারও সেনাবাজারের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন।
ইতঃপূর্বে ইদের আগে ও পরে গত ২২ ও ৩০ মে কক্সবাজার শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, যেমন: চাউল, আটা, তেল, লবণ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি সম্বলিত সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, পূর্বের মতো এবারও গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের নিকট হতে উপযুক্ত দামে সবজি সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে অসহায় ও দুস্থ ৫০০ পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে এ বাজার-সুবিধা প্রদান করা হয়। ২ পদাতিক ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই বাজার-কার্যক্রম পরিদর্শন করেন রামু সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং সেনাপ্রধানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে করোনার প্রভাবে ও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রকোপের কারণে অসহায় দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের কল্যাণে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নানাবিধ কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে এ সেনাবাজারের আয়োজন করা হয়েছে।
রামু সেনানিবাস-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় যে, কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার জুলেখার পাড়া, খিজারীপাড়া, সিপাহীপাড়া, মণ্ডলপাড়া, ফতেহারকুল, মেরুল্লা, রশিদনগর ও ইদগাহ এলাকা থেকে সেনাসদস্য কর্তৃক বৌদ্ধ, হিন্দুসহ সকল সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র মানুষদের তালিকা তৈরিপূর্বক বিশেষ টোকেন প্রদান করা হয়।
সেনা বাজারের প্রবেশপথে সেনাসদস্যদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল জীবাণুনাশক বুথ ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এ সময় হতদরিদ্র মানুষগুলোকে সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায়। এ ধরনের মানবিক সহায়তার জন্য তারা সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বাজার করতে আসা রামু, রশিদনগর ও ইদ্গাহ বাজারের বিনয় বড়ুয়া, সুশীল কর্মকার ও সোহেল বলেন, করোনার কারণে পর্যটন নগরীতে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় আমরা কুটির শিল্পের কর্মচারীরা অত্যন্ত কষ্টের মাঝে আছি।
তাছাড়া বর্তমানে হাতে টাকা-পয়সা একদম নেই। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাল, আটা, লবণ, তেল, আলু, বরবটি, কচুর লতি, লেবু, কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এর আগে সেনাবাহিনী কর্তৃক এ ধরনের বাজার পরিচালনার কথা শুনেছি। আজ নিজে বাজার থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। সেনাবাহিনীর এ ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলায় গত ২৪ মার্চ থেকেই মাঠে আছে সেনাবাহিনী। টহল কার্যক্রমসহ করোনার ভয়াবহতার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি হ্যান্ড-স্যানিটাইজার এবং মাস্ক বিতরণ করছেন তারা। পথচারীদের ফুল দিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের ঘরে ফেরাতে সচেষ্ট হয়েছেন।
এছাড়া নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও সাবানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী কর্মহীন অসহায় পরিবারের মানুষগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছেন। সেনা সদস্যরা কক্সবাজার জেলার প্রবেশদ্বার চকরিয়ায় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের প্রবেশদ্বারে একাধিক ডিজইনফেকশন বুথের মাধ্যমে জরুরি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত যানবাহনসমূহকে ও মানুষজনকে জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থা করছেন।