সবকিছু কেমন যেন নীরব, গম্ভীর, নিষ্প্রাণ হয়ে আছে, বিরাজ করছে নীরব আতংক। জনজীবন চলছে অনেকটা জোর করে চালিয়ে নেয়ার মতো। ভোর হয়, নতুন দিন শুরু হয়, আতংক কাটে না। নানারকম ভয় নিয়েই কাটছে দিন, আসছে রাত, পার হয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস! কবে নাগাদ এই মহামারি থেকে মুক্তি মিলবে সেই আশায় প্রহর গুণতে গুণতে হয়তো পার হয়ে যাবে বছর! ও… শুধু প্রহর গুণে সময় যেন পার করতে না হয় সে জন্য দেশের আমজনতার জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন।
দেশে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বর্তমানে দেশের ৬১টি ল্যাবরেটরিতে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩১টি এবং বাকি ৩০টি দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তবে ল্যাব ও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লেও সংকট কমেনি। অসংখ্য মানুষের অভিযোগ— ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার পরও পরীক্ষা করাতে পারছেন না। আবার নমুনা জমা দিলেও সঠিক সময়ে রিপোর্ট পাচ্ছে না। ঝুলে থাকছে দিনের পর দিন, সাথে ভুল রিপোর্টের প্রমাণ দেখা যাচ্ছে অহরহ।
একটি প্রমাণ দেখা যাক, সদ্য প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ১ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই নমুনা পরীক্ষা করা হলে তার করোনা শনাক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে আবার করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। একজন সদ্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর করোনার সঠিক রিপোর্ট পেতে যেখানে একাধিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয় সেখানে আমজনতার রিপোর্টে ফল কেমন হতে পারে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
সঠিক রিপোর্টের চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় হল অসুস্থ ব্যক্তি দিনের পর দিন ঘুরেও নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে না। আর নমুনা জমা দিলেও রিপোর্ট আসতে সময় লাগছে ৫-৭দিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে যেখানে ৭২ ঘণ্টার বেশি এই ভাইরাস জীবিত থাকে না। সেখানে ৫-৭ দিন পর সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা থেকে কতোটা সঠিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
এসব পরীক্ষার রিপোর্ট আদতেই কি নির্ভুল হওয়ার কোন সুযোগ আছে? আর যদি না থাকে তাহলে কেন মিথ্যা ও ভুল রিপোর্ট দেখানো হচ্ছে?
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সরকার আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়ার কারণেই কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন,”আমরা নিজেদের উদ্যোগে দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত আপডেট করে যাচ্ছি৷ পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ ভালো আছে৷’’
এটা কি আসলেই কোন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের কথা? আর যদি আসলেই করোনা বিস্তারের ২ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়া হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে রোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭ শত ৭৫ জনে দাঁড়ায়। যদিও এটি সরকারের হিসেব, বাস্তবিক তথ্য অনুসারে আক্রান্তের সংখ্যা কি পরিমাণ হতে পারে তা নিয়ে চলছে নানারকম বিশ্লেষণ।
এই যে এতো বড় পদে বসে এমন উল্টা পাল্টা কথা বলে মানুষের কাছে হাসির পাত্র হচ্ছে এটি কি তারা বুঝে না নাকি তারা আসলে জনগণকে বিনোদন দিতে চায়? এতোই যদি প্রস্তুতি নেয়া হয়ে থাকে তাহলে মানুষ কেন নমুনা পরীক্ষা করাতে পারছে না? হাসপাতালে কেন চিকিৎসা পাচ্ছে না? চিকিৎসকরা কেন নিরাপত্তা সামগ্রি পাচ্ছে না?
জানি আমার মতো আপনার মাথাতেও এমন হাজার প্রশ্ন ঘুরতে ঘুরতে হতাশার ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যাচ্ছে। হয়তো এভাবে চলতে চলতে করোনা একদিন চলে যাবে, নয়তো আমি আপনি চলে যাবো নির্মম মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।