করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলা সংক্রান্ত আরও একটি প্রকল্প প্রস্তুত। দেশের ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে প্রকল্পটি। এক হাজার তিনশ কোটি টাকার প্রকল্পটি এরই মধ্যে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে ঝুঁকি এড়াতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক স্থগিত থাকায় যেকোনো সময় বিশেষ অনুমোদন মিলবে প্রকল্পটিতে— এমনটিই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৭ মে) ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্ড অ্যান্ড প্যানডেমিক রেসপন্স’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ব্যবহার করা হবে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ১৯ এপ্রিল অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ১০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করে এডিবি। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় এই ঋণের আকার দাঁড়ায় ৮৫০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ১৩শ কোটি টাকার প্রকল্পের বাকি ৪৫০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য খাত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। জরুরি বিবেচনায় স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের ঋণে একই ধরনের আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা মোাকাবিলা সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব এলে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। বন্ধের মধ্যেও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অনুমোদন পায় করোনা মোকাবিলার প্রথম প্রকল্পটি। ওই প্রকল্পটিও বিশেষ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক হাজার ১২৭ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে খরচ করা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সহজ শর্তের ৮৫০ কোটি টাকার ঋণের অর্থ।
সূত্র জানায়, অনুমোদনের জন্য পাঠানো নতুন এ প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের ১৭ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় পিসিআর মেশিন কেনাসহ পিসিআর ল্যাব স্থাপন, আইসিইউ স্থাপন এবং পিপিই ও মাস্ক কেনা হবে। এছাড়া কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা এবং গুণমানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিকাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হবে।
শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, জনবল নিয়েও কাজ করবে এই প্রকল্প। স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে আধুনিক দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এই প্রকল্পের আওতায়। আরও স্বাস্থ্যকর্মী ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগকেও উৎসাহিত করা হবে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। বলতে গেলে সব নিয়ম-কানুন মেনেই দ্রুত গতিতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী যেকোনো মুহূর্তে প্রকল্পটি অনুমোদন দেবেন।
এডিবি ঢাকা মিশনের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দবার বলেন, গত ৩০ এপ্রিল স্বল্প সুদে ১০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এডিবি। করোনার কারণে তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে দ্রুত গতিতে এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবির দ্রুত সাড়া দেওয়ার একটি শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এডিবি চিকিৎসা সরবরাহ ও সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য সহায়তা দিয়েছে।
গোবিন্দবার আরও জানান, এই ১০ কোটি ডলারের বাইরেও বাংলাদেশের জন্য গত ৭ মে আরও ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এডিবি। ঋণের এ অর্থে বাংলাদেশের ১৫ লাখেরও বেশি দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা নাগরিক উপকৃত হবেন।
সূত্র: সারাবাংলা