করোনা পরিস্থিতিতেও অনলাইন দক্ষতার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা মোমিন

যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়,  তরুণ  উদ্যোক্তা মোমিন দেওয়ান (২৩)  তারই এক উদাহরণ। এখন তার কারখানাটি পুনরায় সক্রিয় হয়েছে এবং মমিন অনলাইনে পণ্য বিক্রির উপর বেশি জোড় দিয়েছেন। এমনকি চার মাস আগেও মোমিন জানতেন না যে এত তাড়াতাড়ি করোনা পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে আবার ব্যবসা শুরু করবেন তিনি। আবার মোমিন দেওয়ান অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে স্যামু লেদারের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

মোমিন দেওয়ান নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবার থেকে ২০১৪ সালে চাঁদপুর জেলা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি তার বড় ভাইয়ের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যান। মমিনের বড় ভাই ব্যবসায়ী হরেলও তিনি চাইতেন মোমিন লেখাপড়া  সমাপ্ত করে  চাকরী করবে বা দেশের বাইরে যাবে। তবে তিনি সবসময় ভাবতেন, নিজে স্বাধীনভাবে কিছু করবেন।

মোমিন বলেন,পড়াশোনার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন ব্যবসায়ের সন্ধান করছিলাম। আমি ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করছি আমার ভাই এটি জানতেন না। আমি আমার পকেট খরচের টাকা ব্যয় না করে সঞ্চয় করেছি এবং বাজার থেকে চামড়ার মানি ব্যাগ এবং বেল্ট কিনে আমার সহপাঠী এবং শুভাকাঙ্খীদের কাছে বিক্রি করেছি। এভাবে উদ্যোক্তা হবার নেশাটা পেয়ে বসে। এরপর আমি ২০১৬ সালে চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম চমড়া খাতটির দেশে এবং বিদেশে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্যই আমি  এই ব্যবসা বেছে নিয়েছি।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে, মোমিন ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য যেমন বেল্ট, মানি ব্যাগ, কর্পোরেট ব্যাগ ইত্যাদি সংগ্রহ করে বন্ধু ও পরিচিতজনদের কাছে বিক্রি করতো । তারপরে বিভিন্ন মেলায় স্যামু লেদার নামে তিনি আনুষ্ঠানিক ব্যবসা শুরু করেন।

মোমিন বলেন,২০১৭ এর মাঝামাঝি সময়ে আমি বি’ইয়া’র সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ঐ প্রশিক্ষণ ও মেন্টরিং আমার অফলাইন ব্যবসা সম্প্রসারণে খুব সহায়ক ছিল।

তিনি বলেন, আমার ব্যবসার সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু কোভিড -১৯ সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছিলো। মহামারীটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না।

মোমিন কথা প্রসঙ্গে আরও বলেন, করোনার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি সম্পর্কে আমার অনুভূতি হ’ল এটি বলা যেতে পারে যে উল্কার মত হঠাৎ এসে সব কিছু থামিয়ে দিয়েছিলো। সবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।  আমার প্রতিষ্ঠান মার্চ থেকে তিন মাসের মতো প্রায় বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা ঘরে বসে ছিল, পণ্য বিক্রি বন্ধ ছিল, কেউ দাম ​​ঠিক মতো দিচ্ছিল না। এদিকে, ক্রমহ্রাসমান বিক্রয়, লকডাউনের কারণে কাঁচামালের অপ্রতুল সরবরাহকে সম্পূর্ণ বিপর্যয় বলা যেতে পারে। তবে আমি হাল ছাড়িনি। যেহেতু আমি বি’ইয়া’র সাথে জড়িত আমি সবসময় তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি।

বি’ইয়া সম্পর্কে মোমিন বলেন, ২০২০ সালের জুনের শুরুতে, আমি ওয়াইবিআই এবং গুগল.ওআরজি সহযোগিতায় ডিজিটাল এবং সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের ৫ দিনের অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলাম। অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে আমি আবারও আশার আলো দেখতে পেলাম। মহামারিটিতে অফলাইন বিক্রয় প্রায় শূন্য হওয়ায় আমি আমার ব্যবসায়ের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছি। প্রশিক্ষণের পরে, আমি অনলাইন বিপণন, সংযোগ এবং বিজনেস টু বিজনেস (বি 2 বি) কে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছি। এখন আমি নিজের ব্যবসায়ের পৃষ্ঠা নিজেই পরিচালনা করছি, আমার ব্যবসায়ের প্রচারের জন্য আমি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে খুব সক্রিয় রয়েছি কারণ অনলাইন ব্যবহার করে কোভিড-১৯ কে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কোনও বিকল্প নেই। এই কারণে, আমি অনলাইনের মাধ্যমে আমার গ্রাহকের সাথে সংযোগ করছি, এই মুহূর্তে এটি একটি একেবারে কার্যকরী উপায়। আমি বি’ইয়া আয়োজিত বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবিনারে অংশ নিয়েছি। আমার ব্যবসা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। আমার কারখানায় আমি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেছি। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং একটি ভাল কাজের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য গত জুন মাসে আমি মোহাম্মপুরের ঢাকা উদ্যানে ২০০০ বর্গফুটের একটি কারখানা নিয়েছি।

মোমিন মনে করেন, এখনো বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা ব্যবসা  পরিচালনা করার  জন্য আমার মত অনেক উদ্যোক্তার জন্য কঠিন হতে পারে । যেমন ই-কমার্স ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বিপণন ও বিক্রয় করার ক্ষেত্রে আরও দক্ষতার প্রয়োজন, আরও প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, গ্রাহকদের আকর্ষণ করা এবং দক্ষ কর্মীর অভাব।

কোভিড-১৯ এ তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মোমিন অভিমত ব্যক্ত করেন, “অন্য উদ্যোক্তাদের কাছে আমার পরামর্শ হ’ল অনলাইনে সক্রিয় থাকুন, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার পণ্য প্রচারে নতুন ধারণা যুক্ত করুন।  এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ব্যবসায়ের  অনলাইন পৃষ্ঠা আকর্ষণীয়, আপডেট এবং সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া অনলাইন পদ্ধতিটি আরও ভালভাবে বুঝতে হলে অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া সকল উদ্যোক্তার প্রয়োজন।

মোমিন দেওয়ান উদ্যোক্তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, পণ্য বা ব্যবসা শুধুমাত্র একটি মৌসুম বা উৎসব কেন্দ্রিক নয়,  ব্যবসা সব সময়ের জন্য এবং টিকে থাকার জন্য  সুতরাং ব্যবসাটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে ধৈর্যশীল এবং পরিশ্রমী হতে হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *