চট্টগ্রাম মহানগরের দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর-প্রার্থী নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে তার বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার শিশুকে হত্যা করিয়েছে একটি চক্র।
রবিবার (৭ জুন) বাকলিয়া থানার ম্যাচ ফ্যাক্টরি রোডে নুরুল আলম মিয়ার বাড়ির ছাদের ট্যাংক থেকে আবদুর রহমান আরাফ (২) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আবদুর রহমান আরাফ নুরুল আলম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুল কাইয়ুমের ছেলে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৯ জুন) নাজমা বেগম নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
বিকেলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দীন মুরাদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার তাজুনুর ইসলাম প্রকাশ বাবুলের স্ত্রী নাজমা বেগম। তিনি বাকলিয়া থানাধীন ম্যাচ ফ্যাক্টরি রোডে নুরুল আলম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়াকে ফাঁসাতে ফরিদ নামে একজনের প্ররোচনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে নাজমা বেগমের জবানবন্দিতে উঠে আসে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নাজমা আর্থিকভাবে দুরবস্থার মধ্যে থাকায় সে সুযোগ নিয়ে ফরিদ তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেন।
পরিকল্পনা মাফিক শিশু আরাফকে হত্যা করে ওই বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকে মরদেহটি ফেলে দেয়, যাতে বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ফেঁসে যান। কিন্তু মূল হত্যাকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে হত্যার আসল রহস্য।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম মর্নিং নিউজ বিডিকে বলেন, আবদুর রহমান আরাফ হত্যার ঘটনায় নাজমা বেগম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে তাকে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করতে পারায় এর সঙ্গে জড়িত আসামিদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন বলেন, নাজমা বেগম ফরিদ নামের এক ব্যক্তির প্ররোচনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মূলত নাজমার আর্থিক অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়েছে ফরিদ। ফরিদের সঙ্গে বাড়ির মালিক নুরুল আলম মিয়ার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর জের ধরে নাজমা বেগমকে টাকা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে নুরুল আলম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনায় ফরিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষিতে তার সাথে আমার দ্বন্ধের সূত্রপাত। ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর-প্রার্থী ইয়াছিন চৌধুরী আছুর গ্রুপ করে। নির্বাচন নিয়ে তারা নানা রকম ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু একটি মাসুম বাচ্চাকে খুন করিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবে- তা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাজমা বেগমের ছেলে হাসান নুরুল আলমের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কাজ করেন। হাসানের কাছ থেকে ছাদের চাবি নিয়ে পার্কিংয়ে খেলার সময় শিশুটিকে ছাদে নিয়ে হত্যা করে পানির ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়।