জাতির সূর্যসন্তান-খ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রাষ্টযন্ত্রের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। এই দায়বদ্ধতার আলোকে তাঁদের জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিয়মিত করে আসছে। কিন্তু লোভাতুর কিছু মানুষ এই সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিতে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেশমাতৃকার এই বীর সন্তানদের। এই লোভাতুর শ্রেণি তৈরি করেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।
জাতির বীর সন্তানদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে রবিবার (৭ জুন) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০০২ এর ৭ (ঝ) ধারা অনুযায়ী গত বছরের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৬৬তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সারা দেশের এক হাজার ১৮১ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয় মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ২ জুন নতুন করে এক হাজার ২৫৬ জনকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
সারা দেশের এক হাজার ১৮১ মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ৩৬ জন। এর মধ্যে মিরসরাইয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জন, সাতকানিয়া ও সন্দ্বীপের ৫ জন করে, রাউজানে ৩ জন। পটিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডে রয়েছেন একজন করে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং, হালিশহর ও কোতোয়ালী থানা এলাকায় রয়েছেন একজন করে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গেজেট, সনদ ও প্রত্যয়ন) জনাব মো: শহীদুল হক ভূঁঞা মর্নিং নিউজ বিডিকে বলেন, গেজেট বাতিল হওয়া ব্যক্তিরা বিমানবাহিনী ও বিজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পর। মুক্তিযুদ্ধের পরে যারা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের গেজেটভুক্তির কোনো কাগজপত্র না থাকার কারণে মন্ত্রণালয়কে এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল জানান, ২ লাখ ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত ২ জুন নতুন স্বীকৃতি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬ জন। এক হাজার ১৮১ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হওয়ায় এ সংখ্যা হতে এঁরা বাদ যাওয়ার কথাও জানান মারুফ।
নতুন করে যারা আবেদন করেছেন, এখনও তাদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়নি। ওই তালিকার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনার কথাও জানান এই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম থেকে বাতিল হওয়া ৩৬ জন হলেন:
১. সিরাজুল হক, পিতা- মৌ. ফয়জুর রহমান, এসি দত্ত লেন, কোতোয়ালী
২. আরুন কান্তি চক্রবর্তী, পিতা- মৃত সুবতিরঞ্জন চক্রবর্তী, জোয়ারা, পটিয়া
৩. নুরুল ইসলাম, পিতা- ওমদা মিয়া, ধর্মপুর, ফটিকছড়ি
৪. রফিকুল ইসলাম, পিতা- আ. সাত্তার চৌধুরী, হিংগলিয়া, রাউজান
৫. পিজুস কান্তি বড়ুয়া, পিতা- বিহারী লাল বড়ুয়া, গহিরা, রাউজান
৬. আরিফ বিল্লাহ, পিতা- মো. ইসমাইল, কদলপুর, রাউজান
৭. তাহের আহম্মেদ, পিতা- মৃত নাজির আহম্মেদ, বোয়ারিয়া, সন্দ্বীপ
৮. মো. আজহারুল ইসলাম, পিতা- আবদুল মালেক, বক্তারহাট, সন্দ্বীপ
৯. মিরনাল কান্তি চক্রবর্তী, পিতা- রাম নারায়ন চক্রবর্তী, দক্ষিণপাড়া, সাতকানিয়া
১০. মোস্তাফিজুর রহমান, পিতা- আব্দুল মান্নান, বাজালিয়া, সাতকানিয়া
১১. মৃণাল কান্তি, পিতা- রামনারায়ণ চক্রবর্তী, দক্ষিণপাড়া, সাতকানিয়া
১২. মৃদুল কান্তি দাস, পিতা- অশ্বিনী কুমার দাস, কেউচিয়া, সাতকানিয়া
১৩. অরুন কান্তি চৌধুরী, পিতা- সুধির বিমল চৌধুরী, কালিয়াস, সাতকানিয়া
১৪. মো. ইউছুফ আলী, পিতা- মো. সিরাজুল হক, মাইতভাংগা, সন্দ্বীপ
১৫. জয়নাল আবেদীন, পিতা- তালেব হোসেন, মুছাপাড়া, সন্দ্বীপ
১৬. এ এস এম জসীম উদ্দিন, পিতা- আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, কালাপানিয়া, সন্দ্বীপ,
১৭. আবুল কালাম আজাদ, পিতা- আজিজুর রহমান, ভাটিয়ারী, সীতাকুণ্ড
১৮. রঞ্জিত কুমার দে, পিতা- তাজেন্দ্র লাল দে, মাদার্শা, হাটহাজারী
১৯. আব্দুর রহিম খান, পিতা- মৃত সৈয়দ আলী খান, হালিশহর হাউজিং বি-ব্লক, হালিশহর
২০. সামাদ আলী খান, পিতা- মোশারফ আলী, লালখান বাজার, ডবলমুরিং
২১. আমিনুল ইসলাম, পিতা- মুন্সি মিয়া, হাদি ফকিরহাট, মিরসরাই
২২. গিয়াস উদ্দিন, পিতা- মো. আব্দুল গফুর মাস্টার, আবু তোরাব, মিরসরাই
২৩. ছাবের আহম্মেদ, পিতা- সফিউজ্জামান, আবু তোরাব, মিরসরাই
২৪. সাইদুল হক, পিতা- মৃত দেলোয়ার হোসেন, আবুরহাট, মিরসরাই
২৫. রবিউল হক, পিতা- জালাল আহমেদ, কোরাহাট, মিরসরাই
২৬. রবিউল হক, পিতা- জালাল আহমেদ, কোরাহাট, মিরসরাই
২৭. মো. ফয়েজ উল্লাহ, পিতা- মৃত মৌলভী শফি উল্লাহ, আজমপুর, মিরসরাই
২৮. আবুল বাশার, পিতা- জোনাব আলী, আজমপুর, মিরসরাই
২৯. এ কে এম খায়রুল হুদা, পিতা- সিরাজুল হক, আবুরহাট, মিরসরাই
৩০. গোলাম রাব্বানী, পিতা- জাকির হোসেন, করেরহাট, মিরসরাই
৩১. হুমায়ুন কবির, পিতা- এবিএম শফিকুল ইসলাম, তেমোহনী, মিরসরাই
৩২. মো. ইসহাক চৌধুরী, পিতা- আমিনুর রহমান, মলি আইশ, মিরসরাই
৩৩. ছালেহ্ আহম্মেদ, পিতা- মোহাম্মদ আলী ইউছুফ, পরাগলপুর, মিরসরাই
৩৪. জোমসেদ আলম, পিতা- আলী আহম্মেদ, বগেন্দুর, মিরসরাই
৩৫. মো. আবু তাহের, পিতা- মো. ফরিদুল হক, অব্দুর হাট, মিরসরাই
৩৬. মো. গোলাম রব্বানী, পিতা- মো. জাকির হোসেন, করেরহাট, মিরসরাই।