জ্বালানি খাতে সোলশেয়ার ও শক্তি ফাউন্ডেশনের যুগান্তকারী উদ্ভাবন

জ্বালানি

জ্বালানি
বিশ্বের প্রথম পিয়ার-টু-পিয়ার বিদ্যুৎ বিনিময় নেটওয়ার্কের সূচনাকারী সোলশেয়ার, শক্তি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জ্বালানি উদ্ভাবনে নিয়ে এসেছে আরেকটি যুগান্তকারী সংযোজন।

যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে, সোলশেয়ার এবং শক্তি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একটি গ্রামীণ অঞ্চলে P2P সোলার মাইক্রোগ্রিডকে একটি পয়েন্ট অফ কমন কাপলিং (পিসিসি) এর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এতে আন্তঃসংযুক্ত সোলার হোম সিস্টেমের একটি নেটওয়ার্ক (P2P সোলার মাইক্রোগ্রিড) থেকে অতিরিক্ত সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযোজন করা সম্ভব হবে।

২১ জুন ২০২২, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকাস্থ সোলশেয়ার অফিসে প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল।

ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এ সময়োপযোগী উদ্ভাবনের জন্য সোলশেয়ার এবং শক্তি ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আশা করি, আজকের অনুষ্ঠান এই ধারণাটিকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে, যাতে পিয়ার-টু-পিয়ার মাইক্রোগ্রিডের সুবিধাগুলি অধিকসংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়।” তিনি এ উদ্যোগের জন্য সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার জনাব জাভেদ প্যাটেল বলেন, “সোলার হোম সিস্টেম এবং জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণে বাংলাদেশের বৈশ্বিক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এই যুগান্তকারী পাইলট প্রোগ্রামকে সমর্থন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। প্রত্যন্ত গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জন্য সুবিধা নিয়ে আসার পাশাপাশি বিদ্যুতের জাতীয় উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির অবদান বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।”

পিসিসি (পয়েন্ট অফ কমন কাপলিং) এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দুটি প্রধান বিদ্যুতায়ন প্রচেষ্টা, জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণ এবং সোলার হোম সিস্টেমের বিস্তারকে পরস্পর যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর একদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রিড যুক্ত থাকবে, অন্যদিকে আন্তঃসংযুক্ত সোলার হোম সিস্টেম স্থানীয় মাইক্রোগ্রিডের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। এ মাইক্রোগ্রিডটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং এই গ্রিড অবকাঠামোটি জাতীয় গ্রিডের সাথে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও ব্যবহৃত হবে। এতে লোডশেডিং হ্রাস পাবে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পরিসেবার স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

সোলার হোম সিস্টেম (SHS) ব্যবহারকারীরা এযাবৎ স্থাপিত তাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রয়ের মাধ্যমে উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। একই সাথে ৬০ লক্ষাধিক সোলার সোম সিস্টেম এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এটি বিদ্যমান স্টোরেজ সম্পদের একীভুতিকরণের মাধ্যমে একটি স্মার্ট গ্রিড গঠনের পথে প্রথম পদক্ষেপ যা শেষ পর্যন্ত ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট (ভিপিপি) গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

শক্তি ফাউন্ডেশনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমরান আহমেদ বলেন, “শক্তি ফাউন্ডেশন সোলার হোম সিস্টেমস (SHS) থেকে জাতীয় গ্রিডে শক্তি প্রদানের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা গবেষণায় সোলশেয়ার এর সহযোগিতা করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত৷ আমরা বিশ্বাস করি যে এটি জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদনের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এই উদ্ভাবন আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উপার্জনের যে সম্ভাব্য সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম সে সম্পর্কে আমরা বিশেষ আগ্রহী। এতে তারা তাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করতে সক্ষম হবে এবং সম্মিলিতভাবে অর্থনীতি ও পরিবেশে অবদান রাখতে পারবে।”

“জাতীয় গ্রিড সম্প্রসারণ ও সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়ন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। এখন গ্রিডের স্থিতিস্থাপকতা, বিদ্যুতের গুণমান এবং নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বৃদ্ধি করা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই পাইলটের মাধ্যমে সৃজনশীল উপায়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করে এটি অর্জন করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।বর্তমানে এটি সোলার হোম সিস্টেমের সাথে শুরু হচ্ছে, ভবিষ্যতে স্থানীয় বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার (বি-টেসলা) ব্যাটারির ক্ষেত্রে চলতে থাকবে”, বলে মন্তব্য করেন ডঃ সেবাস্টিয়ান গ্রো, সোলশেয়ার-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *