
তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য এলাকার যুবকরা নিজেদের উদ্যোগে তৈরী করলেন ১শ মিটার বাঁশের সাকো। গ্রামগুলি হলো- চর ভেলাকোপা, দক্ষিন নওয়াবশ ও টাপু ভেলাকোপার কিছু অংশ। কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার চর ভেলাকোপা গ্রামের আবুল হোসেন মিস্ত্রির বাড়ির পূর্ব দিকে একটি নালার উপর স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতায় এলাকার যুবকরা নিজেদের প্রচেষ্টায় তৈরী করলেন বাঁশের সাকো।
রবিবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয় যুবকদের প্রচেষ্টায় বাঁশের সাকো তৈরীর এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, নালার উপর নির্মিত কাচা রাস্তাটি প্রতি বছর বন্যার সময় পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে যায়। এতে করে জেলা শহরের সাথে তিন গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুরু হয় চরম ভোগান্তি। পানির স্রোত অত্যন্ত বেশি থাকায় স্থানীয় মাঝিরা একটি নৌকা যাতায়াতের জন্য রাখে। সে নৌকা দিয়ে মাত্র ১শ মিটার পথ পাড়ি দিতে জন প্রতি গুনতে হয় ১০ টাকা করে। সামান্য পথটুকু যতবার পাড়ি দেন ততোবারই ১০ টাকা করে দিতে হয়। শত শত মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ হওয়ায় সামান্য ১শ মিটার পথ অতিক্রম করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় মানুষজনকে। একদিকে করোনার হানায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এসব খেটে খাওয়া মানুষজন অন্যদিকে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এসব চরাঞ্চল ও দূর্গম এলাকার মানুষজন। তাই এসব এলাকার দূর্ভোগে পড়া মানুষকে দূর্ভোগ থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর টুংকুর সহযোগীতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাগর, কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মামুনসহ শ্রমজীবী ফরহাদ ছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন যুবকের প্রচেষ্টা ও শ্রমে তৈরী হয় ১শ মিটার বাঁশের সাকো।
সাকোটির মুল উদ্যোগ গ্রহনকারী সাফিউর রহমান সাগর জানান, প্রতিবছর বন্যায় এই এলাকার মানুষজনকে নালার ১শ মিটার নৌকা যোগে পাড়ি দিতে ১০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়াও পারাপারের সময় পড়তে হয় নানা ভোগান্তিতে। তাই এসব মানুষজনের ভোগান্তি কিছুটা লাঘবের কথা চিন্তা করে আমরা এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে বাঁশ সংগ্রহ করে কয়েক ঘন্টা শ্রম দিয়ে তৈরী করেছি সাকোটি।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জমশেদ আলী টুংকু জানান, এলাকার মানুষদের দূর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে আমি যুবকদের বাঁশের সাকোটি তৈরী করতে মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি। যুবকরা নিজেদের প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে বাঁশের সাকোটি তৈরী করেছেন। তবে আমার এই দূর্গম এলাকায় কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র যদি একটু সজাগ দৃষ্টি দিতেন তাহলে কিছুটা হলেও আমার এলাকার মানুষজন দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেত।
উল্লেখ্য, উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টির পানির কারনে কুড়িগ্রামে আবারও অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চলগুলো। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষজনের।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের সবগুলি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।