সে এক জ্যোৎস্নায় ভরা তিমির। ছায়ালোকে ইন্দু তার আলো ছড়াচ্ছে। সমীরন উল্লম্ব গড়িয়ে যাচ্ছে। ঝোপের ছোট ছোট গাছের ফাঁকে জোনাকির আলো টিপটিপ করে জ্বলছে। একটু খানি তামাক পুড়ে ধুম্রজাল হয়ে উড়ে যাচ্ছে, যেন কুহেলিকা। মস্তিষ্কে তার স্মৃতিরা ধীরে ধীরে পাখা মেলছে, স্মৃতির মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইছে, তাতে আবার হালকা হালকা বৃষ্টির ছিটে ফোঁটা এবং ধুলোর ঝাপটা। তবে বিবেক তো বিরুদ্ধ আচরণে মত্ত রয়েছে। নিজের ছায়াটা মনে হচ্ছে পিছু নিচ্ছে। নিস্তব্ধতা চারিপাশ ঘিরে ধরেছে। ধরিত্রী যেন আমার চলার কম্পনে কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রতিটি সম্পর্ক আর অনুভূতি যেন আমার সাথে চলছে। ক্ষণের ব্যবধানে আলো ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে, তমিস্রা তার রূপ দেখানো আরম্ভ করেছে। চলতিপথে স্যান্ডেল এর খসখসে আওয়াজ। ঘানপোকারা চেচাচ্ছে।
হটাৎ কার যেন অস্তিত্ব অনুভব করলাম। পিছে তাকিয়ে একটু দূরে দেখি এক ঘোমটা পরা মেয়ে!! যদিও তার মুখখানা দেখা যাচ্ছে না, তবুও তার সৌন্দর্য অনুভব করতে পারছি। কি সে অপরুপ সাজ!! খানিকক্ষণ চেতনায় বিভোর হয়ে গেছিলাম। হুশ ফিরতেই বুকের ধরফড়ানি বেড়ে গেলো। কে এ রমণী? কোথা থেকে এলো? এতো রাতে এই সাজে এখানে কি করছে? এই সব ভাবতে ভাবতেই আরো খানিকটা এগিয়ে গেলাম। কিন্তু এদিকে কিছুটা ভয়ে আছি। তবুও যেহেতু পুরুষ মানুষ, আবার পিছু তাকালাম। কিন্তু আবার ভয় জাগলো মনে, কারণ সে তখন ছিলো না! আবার হাটা শুরু করলাম। তখন আমি সারাদিনের খাটা-খাটনির পর খুব ক্লান্ত। সামনে দেখি ল্যাম্পপোস্ট এর পাশে একটা বসার যায়গা। বসলাম, আবার চাদের দিকে একটু তাকিয়ে আবহাওয়া টা উপভোগ করছি। একটু পর আবার মনে হলো পেছনের দিকে কে জানি আছে! আবার তাকালাম দেখি সেই মেয়েটা!! তাকে কেন জানি চেনা চেনা লাগছিলো। উঠে দাড়ালাম, ভীরু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম কে তুমি? এখানে আমার পিছু পিছু কী তোমার? কোনো জবাব আসলো না ওপাশ থেকে। কোনো জবাব না পেয়ে আবার বললাম কে তুমি? সে নির্মল একখানা হাসি দিয়ে বললো, আমি তোমার সে! আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই, হুট করে হাতে আগুনের তাপ অনুভব করলাম! দেখি সিগারেট টা শেষ হয়ে গেছে, আমি এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।
বিবেক স্মৃতির বিরুদ্ধে থাকলেও তাকে আটকাতে পারিনি! তবে তার মোহ আমায় আবার টেনে নিয়েছে। আর ওই মেয়েটা হয়তো আমার সেইই ছিল। ব্যাস আবার হাটা শুরু করলাম। এই পথ যেন ফুরাবার নয়।