প্রযুক্তি ব্যবহারে শক্তিশালী হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত

প্রযুক্তি

প্রযুক্তি

বর্তমানে বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি বা টেকনোলজির ভূমিকা অপরিসীম। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এই বাক্যটির আসল মর্ম আমরা সবাই কমবেশি উপলব্ধি করতে পেরেছি। স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত প্রযুক্তির  ব্যবহার মহামারি মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রেখেছে। করোনাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দেশের ৯৬ শতাংশ মানুষ টেলিমেডিসিন এবং টেলিরেডিওলজি সেবার মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে।  প্রযুক্তিনির্ভর এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম করোনা-পরবর্তী সময়েও মানুষের মধ্যে থাকবে বলে মনে করেন তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা। এই বিষয়ে যদি সরকারি ও বেসরকারি খাত যৌথভাবে এগিয়ে আসে এবং তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে এই প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া বলে সম্ভব মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানি মাইসফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোঃ মনজুরুল হক।

মাইসফট লিমিটেড মহামারির শুরু থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন প্রযুক্তিগত টুলস ও সল্যুশন সহায়তা দিয়ে আসছে। মাইসফট লিমিটেডের উদ্ভাবিত ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন এবং ইন্টিগ্রেটেড ভিডিও কলিং সম্বলিত টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব ডেভলপকৃত হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) স্বয়ংক্রিয়করণে সহায়তা করে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)এই সিস্টেমের প্যাকস্ ফিচার ব্যবহার করে করোনা মহামারির সময়ে রোগীর সাথে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়।

করোনাকালীন সময়ে যখন সরাসরি ডাক্তারদের সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে তখন এই সকল প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবা মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বর্তমানে স্বাভাবিক রুটিন স্বাস্থ্যসেবা আবার চালু হলেও টেলিমেডিসিন সেবা কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়নি; বরং এ সময়ে এটি একটি অভূতপূর্ব বিষয় হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। করোনা মহামারি কেটে যাওয়ার পরও আমাদের মতো দেশে, যেখানে প্রত্যন্ত এলাকায় সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই, টেলিমেডিসিন হয়ে উঠেছে একটি কার্যকর ব্যবস্থা। রোগী দূরবর্তী কোনো স্থান, এমনকি অজপাড়াগাঁ থেকেও উন্নত সেবা নিতে পারছেন। এ জন্য তাঁকে সময় ও অর্থ ব্যয় করে নির্ধারিত দূরবর্তী স্থানে যেতে হচ্ছে না।

দেশে এখন প্রায় ৩০-টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মাইসফটের মাইহেলথবিডি। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, মাইহেলথবিডির ওয়েবসাইট (www.myhealthbd.com) ও মোবাইল অ্যাপ থেকে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন এবং ইন্টিগ্রেটেড ভিডিও কলিং সম্বলিত টেলিমেডিসিন সেবা নেয়া এবং সরাসরি ডাক্তার দেখানোর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও অনলাইন পেশেন্ট পোর্টালে পেশেন্টর পূর্ববর্তী মেডিকেল রিপোর্ট সংরক্ষণ করা, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট রিপোর্ট আপলোড করা, একই ডাক্তারের ফলোআপ কনসালটেশনসহ স্বাস্থ্যসেবার ওয়ান স্টপ সলিউশন সেবা দেয়। বর্তমানে মাইহেলথবিডি ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত ডাক্তারের সংখ্যা প্রায় দুইশতাধিক।

টেক-স্টার্টআপ হিসেবে মাইসফট লিমিটেডের পথচলা শুরু হয় ২০০৯ সালে। স্বাস্থ্যখাতকে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবায় রূপান্তর করবার লক্ষ্যে মাইসফট লিমিটেড হসপিটাল, ল্যাব এবং রেডিওলজি অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরিতে মনোনিবেশ করে। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ শতাংশ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই ধরনের অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাইসফট লিমিটেড বিগত একদশকে সারা দেশে প্রায় ২০০-টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার  অটোমেশনে সফলভাবে সফটওয়্যার সেবা দিয়ে আসছে। এই সম্পর্কে মোঃ মনজুরুল হক বলেন, আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের একটি সম্পদ হিসেবে তৈরি করা। উন্নত মানের কমপ্লেক্স হেলথকেয়ার সফটওয়্যার আমরা এখন সম্পূর্ণরুপে দেশীয় মেধা ব্যবহার করে দেশেই তৈরি করতে পারছি, তাই আমাদের আর বিদেশি সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। দক্ষ মানবসম্পদ গঠনেও এই খাতের ভূমিকা অপরিসীম।

বাংলাদেশের অনেক অভিনব উদ্যোগ দেশের বাইরেও সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন সফটওয়‌্যার নির্মাতারা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (ডব্লিউসিআিইটি) সম্মেলন ‘গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ মাইসফট লিমিটেডের স্বাস্থ্যসেবা খাতের অন্যতম উদ্যোগ মাইহেলথবিডি ডটকম (https://myhealthbd.com/)। উদ্ভাবনী ই-স্বাস্থ্য সমাধান বিভাগে রানার আপ হয়েছে দেশের স্বাস্থ্যসেবাখাতের অত্যাধুনিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *