শিপন নাথ: ছয় ঋতুর দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে আমাদের সুনাম–সুখ্যাতি আছে। এত ঋতুবৈচিত্র্য আর কোথাও নেই।
আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। বর্ষায় প্রকৃতিতে মহান স্রষ্টার অপরূপ সৌন্দর্যের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয়। অঝোর ধারায় বৃষ্টিস্নাত হয়ে সবুজ গাছগাছালিতে সুন্দর হয়ে ওঠে আমাদের চারপাশ। বৃষ্টি আমাদের প্রকৃতিকে যেমন ফলে ফসলে ভরিয়ে দেয়, তেমনি আমাদের মন-মানসকেও স্পর্শ করে। বর্ষার দিনে টিনের চালে টাপুর টুপুর রিনিঝিনি বৃষ্টির ছন্দে উদাস হয় মন। বৃষ্টি ঝরে গ্রামে, হাটে, মাঠে, শহরে, নদী ও পাহাড়ে। তুমুল বৃষ্টিতে গাঁয়ের ছেলেরা নেমে পড়ে ফুটবল নিয়ে। পুকুর জলে টুপ টুপ ডুব দিয়ে আনন্দে খেলা করে হাঁসের ছানা, ডেকে ওঠে কোলাব্যাঙ।
মাছেরা ছুটে বেড়ায় বৃষ্টির নতুন পানিতে। দুষ্টু ছেলেরা কলাগাছ কেটে ভেলা বানায়। কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে মেতে ওঠে দুরন্ত কিশোরের দল। ঝাঁপ দেয় পানিতে, ডুব সাঁতারে হার মানায় পানকৌড়িকেও। বর্ষার এই রূপ কখনো কি ভোলা যায়? বর্ষার সবই উপভোগ্য। গ্রামের মতো শহরে বর্ষার সৌন্দর্য খুব একটা ফুটে ওঠে না। তবুও ইট-পাথরে ঘেরা শহুরে লোকজনও বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝুম বৃষ্টিতে কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় বর্ষার পরশ পেতে। কেউ ছাদে উঠে বৃষ্টির ছোঁয়া নিয়ে জুড়িয়ে নেয় মন। জ্যৈষ্ঠ মাস পেরিয়ে গাছে গাছে কদম ফুল জানান দেয় আষাঢ় এসেছে, এসেছে বর্ষাঋতু। গাছে গাছে কদমের ডালে এর চমৎকার ফুল সবাইকে আকর্ষণ করে। কদম ফুলের হালকা মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আছে। কদমের এ রূপের কারণে একে যুগে যুগে কবিরা তাঁদের গান ও কবিতার মাঝে অলঙ্কার হিসেবে সাজিয়েছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা ও গানে বর্ষাকে অতুলনীয় করে তুলেছেন। রবিঠাকুর তাঁর গানে লিখেছেন-
‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’।
বৃষ্টি নিয়ে আমাদের সাহিত্যে অজস্র ছড়া, কবিতা, গল্প ও গান দেখা যায়। কবিদের ভাবনায় বর্ষা এক অনিন্দ্য সুন্দর সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে তার পরের কবি লেখকরা তো বটেই আগেকার কবি-লেখকরাও বর্ষার আবাহন করে গেছেন তাঁদের বহু কবিতা-গান-গল্পে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন আমাদের প্রিয় দেশ। আর এর বর্ষার প্রকৃতি চিরকাল মানুষকে আকৃষ্ট করেছে, ভাবুক করেছে, করেছে মোহিত।