মহামারি করোনা সঙ্কটের মধ্যে মায়ের চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে চুরির ঘটনায় অমানবিক শারিরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মমিনুল ইসলাম (১৫) নামের এক কিশোর।
মঙ্গলবার (৯ জুন) সকালে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে দুই লিটার তেল চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে কিশোর মমিনুল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চুরি করতে দেখে হাতে নাতে ধরার পর জনতা তাৎক্ষনিক তার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে হঠাৎ লালমনিরহাট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী লাল ঘটনাস্থলে এসে তাকে মারধর শুরু করেন।
তারা আরো বলে, মারধরের এক পর্যায়ে মমিনুল নিজেকে বাঁচাতে আশরাফ আলীর পা ধরে ক্ষমা চাইলেও তিনি তাকে পিটাতে থাকেন। মারধরের এক পর্যায়ে স্থানীয়দের অনুরোধে ছেড়ে দেনেআশরাফ আলী।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই কিশোরকে নির্যাতনের স্থিরচিত্র ও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। দুই মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যবসায়ী আশরাফ আলী লালসহ আরও কয়েকজন তাকে মেঝেতে ফেলে বেধড়ক মারধর এবং পা দিয়ে মুখ ও গলা চেপে ধরেছেন।
এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৌড়ঝাঁপ। আশরাফ আলী লালকে শহরের মিশন মোড়ের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।
এ ঘটনায় বুধবার (১০ জুন) দুপুরে নির্যাতিত কিশোর মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলার আসামি করা হয়েছে লালমনিরহাট জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী লালসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার কিশোর মমিনুর ইসলাম বলেন, ‘মায়ের চিকিৎসার জন্য আমি যে কাজটি করেছি সেটি ঠিক হয়নি। ধরা পড়ার পর আমি অনেকবার ক্ষমা চেয়েছি। তাদের বলেছি, আমার মা অসুস্থ, কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে মারধর করতেই থাকে। অবশেষে জীবন বাঁচাতে লাল মিয়াকে বাবা বলে ডেকেছি। জীবন ভিক্ষা চেয়েছি। বিনিময়ে তিনি আমাকে একাধিক লাথি মেরেছেন। পা দিয়ে গলা চেপে ধরেছেন। কিন্তু আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। আমি এ নির্যাতনের বিচার চাই। ’
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান, এ নির্যাতনের ঘটনায় আশরাফ আলী লালসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিওতে নির্যাতন করতে অনেককেই দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, জন্মের ৩ মাসের মাথায় কিশোর মমিনুল ইসলামকে (১৫) লালমনিরহাট রেলস্টেশনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় স্বজনরা। এরপর তাকে কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে যান লালমনিরহাট পৌরসভার চাঁদনী বাজার এলাকার নুর মোহাম্মদ ও গোলাপী বেগম দম্পতি। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। তাই মমিনুল ইসলামকে নিজের সন্তানের মতো করে বড় করছিলেন তারা। সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না। সম্প্রতি করোনার কারণে নুর মোহাম্মদের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। আগে দিনমজুরি করে সংসার চালালেও এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তাদের। একই সঙ্গে মা গোলাপী বেগম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রয়েছেন। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ।