আমরা মানুষ বৈচিত্রে ভরা প্রাণী, জীবিকার জন্য সবরকম ছল-চাতুরী-ই জানি…! বেঁচে থাকার জন্য যখন একদল মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দু’বেলা খেয়ে পরে নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য লড়াই কড়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন অন্য একদল অসহায় মানুষকেই বানিয়ে ফেলেছে গিনিপিক।
আমরা পথে-ঘাটে, দেয়ালে, বাসের গায়ে বিভিন্নরকম আকর্ষণীয় বেতনের চটকদার চাকরির বিজ্ঞাপন দেখি। সারাবছর ধরে এমন বিজ্ঞাপন চলতেই থাকে। প্রশ্ন আসতে পারে, কি এমন অফিস যাদের এতো লোকের প্রয়োজন হয়? আর এতো চাকরির সুযোগ থাকার পরও কেনোইবা হাজারো তরুণ বেকার ঘুরছে? ঠিক তাই, আপনার মতো আমারও প্রশ্ন জেগেছিল তাই নিজেই চাকরিপ্রার্থী হয়ে গিয়েছিলাম তাদের অফিসে। একটি নয়, পর পর দুটি অফিসে গিয়ে উপস্থিত হই সশরীরে।
অফিসে ঢুকতেই আঞ্চলিক ভাষার সাথে ডং মিশ্রিত ভাষায় শুদ্ধভাবে স্বাগতম জানানোর চেষ্টা। কথার উচ্চারণ শুনেই কিছুটা আঁচ করা গেলো সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হতে পারে। বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়ার কথা শুনে তৎপরতা যেন একটু বেড়ে গেলো। পাতলা ফ্যালফ্যালে কাগজের ফর্ম ধরিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে তা পূরণ করতে বলে ক্যাশকাউন্টারে ২০০ টাকা জমা করতে বলা হল। প্রশ্ন করতেই জানতে পারলাম এটা ফর্মের ফি। টাকা জমা না দিয়ে তাদের সিনিয়রের সাথে কথা বলতে চাইলাম। ৫/৭ মিনিট অপেক্ষার পর মিললো সাক্ষাৎকার।
চাকরির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইতেই বলা হল আপনাকে আমরা কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে সিলেক্ট করেছি। কিছুটা অবাক হলাম! কোনরকম ইন্টার্ভিউ ছাড়াই চাকরি…! আপনার কাজ হবে নতুন চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করা, তাদরে কাছে ড্রেস বিক্রি করা। তবে জয়েন করার আগে আপনার রেজিস্ট্রেশন ও কার্ড গ্রহণের জন্য ৭০০০ টাকা জামানত লাগবে।
এতকিছুর পর জামানতের কথা শুনে বুঝতে পারলাম তাহলে এটাই তাদের ব্যবসা। এভাবেই তারা প্রতিনিয়ত গ্রামের অসহায় মানুষকে লোভ দেখিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে জামানত গ্রহণ করে। আর দিনের পর দিন ঘুরিয়ে একদিন অফিসের ঠিকানা বদলে চলে যায় আত্মগোপনে। কিছুদিন পর আবার নতুন নামে শুরু করে কার্যক্রম। আর এভাবেই বলির পাঠা হতে থাকে চাকরি সন্ধানী অসহায় মানুষ।
প্রশাসনের নজরদারি থাকলে হয়তো এতো সহজে এভাবে ধোঁকাবাজি করা সম্ভব হতো না। তাই এই অপকর্ম বন্ধ করতে প্রয়োজন প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপ।
লেখক:
মেহেদী হাসান রাজু
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।