করোনার প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে হাওয়া লাগার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেছে ভ্রমণ পিপাসুদের গায়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের বালুকাবেলায় হাওয়া লাগানো। পর্যটন নগরী খ্যাত এই শহরে বিশ্বের সব পর্যটন স্পটের ন্যায় জনসাধারণের আনাগোনা শূণ্যের কোটায়। রেডজোনের আওতাভুক্ত হওয়াতে তার প্রখরতার ছাপটাও বেশ লক্ষনীয়।
এদিকে টানা ভারী বর্ষণের কারনে পাহাড় ধসের শঙ্কা মাথায় নিয়ে জলাবদ্ধতার কল্যাণে সাগরপাড়ের নৌকা আর রাস্তার গাড়িকে একসাথে মিশে একাকার হওয়ার ঘটনাও দেখতে হয়েছে। আবহাওয়া অফিসেও জারি করে রেখেছে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত। এক কথায় বলতে গেলে কক্সবাজারের বর্তমান অবস্থা যাচ্ছেতাই।
এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে আশাজাগানিয়া খবর হচ্ছে সমুদ্র হতে মাত্র সাড়ে ছয়শত ফুট দুরত্বে সুগন্ধ্যা পয়েন্ট এ অবস্থিত ১১ তলাবিশিষ্ট তারকা হোটেল ‘সি প্রিন্সেস’কে করা হচ্ছে করোনা আইসোলেশন সেন্টার।
আগামী শনিবার (২০ জুন) থেকে চালু হচ্ছে ২০০ বেডের বিলাসবহুল এই আইসোলেশন সেন্টার। যেখানে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার মর্নিং নিউজ বিডিকে বলেন, করোনা চিকিৎসার অন্যতম উপদান হলো নির্মল বিশুদ্ধ বাতাস। ফুসফুসে আঘাত হানা ভাইরাস করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আইসোলেশন কক্ষটি জানালার পাশে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেটি মাথায় রেখে সমূদ্রের তীরের নির্মল পরিবেশে আইসোলেশন সেন্টারটি নির্ধারণ করা হয়েছে।’
রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থীদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত জাতিসংঘের একাধিক দাতা সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ২০০ বেডের এই আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। করোনা রোগীদের জন্য এ রকম মনোরম পরিবেশ তিনিই চিহ্নিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘অদৃশ্য করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই আতঙ্কে আছি। সংক্রমণও দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতাল-আইসোলেশন সেন্টারে গাদাগাদি অবস্থা, জায়গার সংকট। বহু করোনা রোগীর ঘরে থাকার জায়গা নেই। থাকলেও আলাদাভাবে থাকার পরিবেশ নেই। সবদিক বিবেচনা করে সৈকত তীরের নির্মল পরিবেশে তারকা হোটেলটি আইসোলেশনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি রোগীরা চিকিৎসার পাশাপাশি মন ভরে শ্বাস নিতে পারবেন। শনিবার সকাল থেকে সেন্টারটি চালু হচ্ছে। করোনা রোগীরা বিনা ভাড়ায় হোটেলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে অসচ্ছল রোগীদের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’
আইসোলেশন সেন্টারটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকছেন সমন্বিতভাবে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের ভার বহন করবেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস। রোগীদের ওষুধ, খাবার, বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সকল হিসেবের ব্যয়ভার বর্তাবে জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাধে।
আরও পড়ুন: দেশে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ
সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, অপেক্ষাকৃতভাবে যেসকল রোগীর উপসর্গ নেই, যাঁরা মোটামুটি সুস্থ, তাঁদের এই আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হবে। আর যেসব রোগীর বাড়িতে আলাদা থাকার জায়গা বা ব্যবস্থা নেই কিংবা বাড়িতে থাকলে সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে তাদেরকেও এই আইসোলেশন সেন্টারের আওতাভুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, আইসোলেশন সেন্টার হতে যাওয়া হোটেলটির প্রতিটি কক্ষ হতে পশ্চিমের সমুদ্রকে অবলোকন করলে বিপরিত পাশে থমকে থাকা সবুজ উচু পাহাড়ের সারিকে আলিঙ্গন করতে হয়। সমুদ্রের বিশালতা আর পাহাড়ের গগনচুম্বী হাতছানি, প্রকৃতির এই অপরূপ মিশেলইতো প্রয়োজন করোনার সাথে যুদ্ধে মানসিকতার শক্তিকে এগিয়ে রাখতে।