সুস্বাদু কাটুয়া ডাটা চাষে পূরণ হবে দেশের সবজি চাহিদা

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-নাটোর জেলায় বা বলা যায় বরেন্দ্র এলাকায় কাটুয়া ডাঁটার ফলন বেশি পরিমাণে হয়। এ অঞ্চলে এ ডাঁটার বেশ সু-খ্যাতি আছে। এমনও দেখা যায় এ অঞ্চলে শহরের এক চিলতে জমিতেও এটির আবাদ করা হয়। কাটুয়া ডাঁটা চাষ রবি (শীতকাল) ও খরিফ (গ্রীষ্মকাল) উভয় মৌসুমে শাক-সবজি হিসেবে করা যায়। কাটুয়া ডাঁটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-এ, বি, সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম ও লৌহ বিদ্যমান। যা অন্যান্য ডাঁটাতেও (Amaranth) বিদ্যমান। ডাঁটার কাণ্ডের চেয়ে পাতা বেশি পুষ্টিকর। খুব কম সবজিতে এত পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে।

বপন সময়: খরিফ মৌসুম (মার্চ-এপ্রিল) ও রবি মৌসুম (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর)।

বীজ হার: প্রতি শতকে সারিতে বীজের হার ৮০ গ্রাম এবং ছিটিয়ে ১২০ গ্রাম।

বীজ নির্বাচন: সাধারনত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো বীজ নির্বাচনে সহায়ক-

– রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

– সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

মাটির বৈশিষ্ট্য: ডাঁটার জন্য উর্বর ও দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত অথচ ‘জো’ থাকে এমন মাটিতে এটি সবচেয়ে ভাল জন্মে।

জমি তৈরি: প্রায় তিন ফুট প্রশ্বস্ত এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ লম্বা করে বেড তৈরি করতে হবে। দু’বেডের মাঝে এক ফুট (৩০ সেমি.) নালা থাকলে ভাল হবে।

বীজ বপন: বীজ সরাসরি ছিটিয়ে অথবা লাইন করে বপন করা যায়। লাইনের ক্ষেত্রে বেডের উভয় পাশে ১০ সে.মি. বাদ রেখে লম্বালম্বি ২০ সে.মি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বপন করতে হবে। বপনের পর কাঠি বা হাতদিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বপনের সময় সম পরিমাণ ছাই বা বালি মিশিয়ে বপন করলে সমভাবে পড়বে। জমিতে রস না থাকলে ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। তাহলে বীজ দ্রুত এবং সমানভাবে গজাবে।

সার ব্যবস্থাপনা (প্রতি শতাংশে):

পচা গোবর/কম্পোস্ট – ৪০ কেজি, ইউরিয়া সার- ৩০০ গ্রাম, টিএসপি সার- ৮০০ গ্রাম, এমওপি সার- ৬০০ গ্রাম।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি: সমুদয় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার শেষ চাষের সময় সমানভাবে ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের ১৫ দিন পর অবশিষ্ট পটাশ এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

গাছ পাতলাকরণ ও আগাছা দমন: বীজ বপনের এক সপ্তাহ পর গাছ পাতলাকরণ ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। সারিতে ৫ সে.মি. পর পর চারা রেখে পাতলা করে দিতে হবে। জমির উপর চটা লেগে গেলে ভেঙ্গে দিতে হবে। এতে করে দ্রুত গাছ বৃদ্ধি পাবে এবং গোড়া পচা রোগ থেকে রক্ষা পাবে।

পানি সেচ: শুষ্ক মৌসুমে এক সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে। নতুবা শাক খসখসে হয়ে যাবে।

ডাঁটা সংগ্রহ ও পরবর্তী করণীয়: ভালো স্বাদ পাওয়ার জন্য পাতা নরম বা মোলায়েম অবস্থায় শাক সংগ্রহ করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকলে ৫-৭ দিন পর শাক সংগ্রহ করতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন: সাধারণত কাটুয়া ডাঁটায় মরিচা রোগ ও শুয়া পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। মরিচা রোগ ও শুয়া পোকার আক্রমণ পরবর্তী লক্ষণ ও প্রতিকার আলোকপাত করা হলো-

মরিচা রোগ:

লক্ষণ – এ রোগ গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশকেই আক্রমণ করে। সাদা অথবা হলুদ দাগ পাতার নিচে দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতা মরে যায়।

প্রতিকার – প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

শুয়া পোকা:

লক্ষণ – এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।

প্রতিকার- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ঔষধগুলোর যেকোন একটি ৪.৫ -৫ এম এল প্রতি শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।

ফসল কাটা: বীজ বোনার ৩০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। আর ডাঁটার জন্যে আরো বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

ফলন: বিঘা প্রতি ৩৫ – ৪০ মণ

বীজ উৎপাদন ও সরক্ষণ:

– দু’টি জাতের মধ্যে ৫০০ মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

– বীজ উৎপাদনের জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করতে হবে।

– বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব উভয়ই এক ফুট হতে হবে।

– রোগ-পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

– বীজ কালো রং ধারন করলে সংগ্রহ করা যাবে

– সাধারনত বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *