
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম শ্রেণী হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সময়টাকে প্রধানত তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রাথমিক,নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক। এই তিন স্তরে শিক্ষা অর্জনের সময়টাকে বলা হয় শিক্ষার্থীদের স্কুল জীবন। যেখানে থাকে মেধা বিকাশের ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা, থাকে আবেগের মিশেলে দুরন্তপনা আর শেষ পর্যায়ে যোগ হয় জীবন জীবিকাকে কেন্দ্র করে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রার সূচনা। বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন যাত্রার দ্বার এসএসসি বা মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা।
আজ সেই বহুল কাঙ্খিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ফল প্রকাশ হলো। বহুল কাঙ্খিত এজন্যই বলা—- সমগ্র বিশ্বে করোনার থাবায় জর্জরিত মানব সভ্যতার প্রতিটি স্তর। এই অদৃশ্য ভাইরাস আর মানুষের সংগ্রামের যাতাকলে শিক্ষা বিভাগকেও পিষ্ট হতে হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ বেশ কয়েকবার পেছাতে হয়েছে।
প্রতি বছর এই এসএসসির ফলাফলের দিন সমগ্র দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে দেখা যায় এক উৎসবের আমেজ। স্কুল ক্যাম্পাসে মঞ্চায়ন হয় আবেগের সংমিশ্রণে কিছু আক্ষেপ আর হতাশার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এসবের কিছুই দেখা হয়নি! শিক্ষার্থীদের আবেগের উচ্ছ্বাস আর আক্ষেপগুলো ছিলো ঘরবন্ধী। কেননা করোনা সংক্রমণ রোধকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার আলোকে শিক্ষার্থীদের ফল পেতে হয়েছে ঘরে বসেই।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে লকডাউন অন্যদিকে সবার মধ্যে এক ধরণের আতঙ্কের ছাপ। এসব কিছুর কারণে স্কুলগুলোতে ছেলে মেয়েদের সেই চিরচেনা রেজাল্ট উৎসব নেই। তবে তারা ঘরে বসেই বাবা মা’র সাথে রেজাল্টের উৎসব পালন করছে।
আজ রবিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায় গতবারের চেয়ে ফলাফল এবার কিছুটা ভালো। পাশের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পেয়েছেন এক লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। যা গতবারের চেয়ে বেশি।
জারিন নামের এক শিক্ষার্থী মর্নিং নিউজ বিডিকে বলেন, সে নগরীর খাস্তগীর স্কুল থেকে জিপি ৫ পেয়েছেন। স্বপ্ন ছিল স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে ফলাফলের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। কিন্তু করোনার কারনে তার হয়ে ওঠেনি। তবে সে জানায় বাবা মার সাথে ঘরে বসেই ফলাফলের উচ্ছ্বাসে মেতেছে।
রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিদোয়ান চৌধুরী জানায়, এবারের রেজাল্ট উৎসব ভিন্ন। সেও ঘরবন্দী হয়ে বাবা মা’র সাথে এ উৎসব পালন করেছেন। ভালই উপভোগ করছেন। তবে বন্ধুদের সাথে উৎসবটা করতে পারলে আরও বেশি উপভোগ্য হতো বলে সে জানায়।
নাসিরাবাদ গার্লস স্কুলের রাইসাতুল আলম নামের এক জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী বলেন, তিনি ঘরে বসে রেজাল্ট দেখার কোনো চিন্তা ছিল না। বন্ধুদের সাথেই স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট দেখার ইচ্ছা ছিল। করোনায় সবকিছু বন্ধ থাকায় সেটা হয়নি। বাবা মার সাথে রেজাল্ট অনলাইনে দেখার জন্য সে প্রস্তুত ছিলোনা। তাই সে একটু হতাশ।
অভিভাবকদের মতে, তারা সন্তানকে সাথে নিয়ে অনলাইনে রেজাল্ট দেখাটা প্রত্যাশা করেনি। তবে বাস্তবতার নিরিখে তা মেনে নিতে হবে। তবে সন্তানের ফলাফল ভালো হলে তা যেভাবেই পাওয়া হোক না কেন, আনন্দই বটে।