“আত্নহত্যা” নাকি হত্যা 

আত্মহত্যা

সবকিছুর স্থায়ী সমাধানের জন্যই মানুষ মূলত আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু নিজেকে হত্যাই কি সবকিছুর সমাধান! তা আমি অন্তত মনে করি না। বাংলাদেশে দিন দিন আত্নহত্যার পরিমাণ ভয়ানক হারে বেড়ে চলছে। বিষন্নতা , মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা, নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ের মনোভাব না থাকা আত্নহত্যার প্রধান কারণ। মানুষের জীবনে খারাপ সময় আসবে এটা স্বাভাবিক। এই সময়টা পার করার মনোভাব না রেখে বরং আত্নহননের শক্তিশালী ও তাৎক্ষনিক তীব্র ইচ্ছা থেকেই আত্নহত্যার ধাপ শুরু।

অনেকে আবার  চলমান পরিস্থিতির মোকাবেলা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার পথ থেকে কিংবা নিজের পরাজিত চেহারা নিজেকে না দেখানোর জন্যও আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। এছাড়াও সামাজিক অবহেলা, কটূক্তি, অপরাধ বোধ পারিবারিক সহিংশতা, যৌন নিপীড়নের স্বীকার থেকেও আত্নহত্যার প্রকোপ বেড়েই চলছে ।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তথ্য অনুযায়ী গত বছর প্রায় ৬৭ হাজার আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৷ পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন মা বাবার বিছিন্নতা অথবা পরিবারের কারো উপর ভরসা করতে না পারাও একটা কারণ। বর্তমানের বহু ছেলে-মেয়ে প্রেম ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পর সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার ব্যথাটাকে মেনে নিতে পারে না। তার জীবনের একটা চলমান রুটিনের বিপর্যয় ঘটে ফলে একাকিত্বের চাকা ঘুচাতে আত্নহত্যাকে বেছে নেয়। মানুষ সচরাচর সামাজিক, পরিবেশগত কারণ এবং অন্যান্য ঝুঁকি নিয়ে আত্নহত্যা করে ।বর্তমানে আমরা সকলেই কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছি। সকলকে দৈনন্দিন রুটিন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা, বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে তাচ্ছিল্য অবজ্ঞার জন্য মানুষ বিষন্নতায় ভুগছে। ফলে নিজের সাথে নিজের লড়াই করার আগ্রহ টা হারিয়ে ফেলছে। ফলে একমাত্র সমাধান হিসেবে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বাংলাদেশের যুবতী মেয়েদের বেশিরভাগ আত্নহত্যা করে স্বামীর বাড়িতে নীপিড়ন, গর্ভধারণ, বিশ্বাসঘাতকতা, তালাক , সন্তান জন্মদানের অক্ষমতা থেকে৷ আত্নহত্যার আরও সাধারণ কিছু কারণ হলো দারিদ্রতা , পরীক্ষায় পাশের ব্যর্থতা, দীর্ঘকাল রোগযন্ত্রনা। এই সমস্যাগুলো দেশের সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের দিকনির্দেশনা ও দেয়।আমাদের দেশে অল্পবয়সী মেয়েদের আত্নহত্যার প্রকোপ বেশি।

আত্নহত্যার ধরণ ও আছে বিভিন্ন রকম। কেউ নিজেই নিজের জীবন নেয়। আবার কেউ কেউ এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আত্নহত্যা করে। একে প্যাক্ট সুইসাইড বলে।  আবার কখনো কখনো দলের চাপে অনেকে একসঙ্গে আত্নহত্যা করে। একে বলে ম্যাস সুইসাইড। সাধারণ মানুষের কাছে  আত্নহত্যা একটি সাধারণ দুঃখজনক ঘটনা হলেও যারা আত্নহত্যা করে তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা এক পর্যায়ে পরে না। অনেক আত্নহত্যা প্রবণ ব্যক্তি মানসিক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতেও অনীহা প্রকাশ করে।

আত্নহত্যা প্রতিকারে সকলের এগিয়ে আসা খুব বেশি প্রয়োজন। আপনি যদি কখনো জীবনের মায়া হারিয়ে ফেলেন তবে শুধু জীবনের খারাপ মুহূর্ত নিয়ে ভাববেন কেনো ? আপনার জীবনে নিশ্চয়ই এমন কিছুও রয়েছে যেটাকে মনে করে আপনার বেঁচে থাকা উচিত। নিজের খারাপ লাগাগুলো কোন বিশ্বস্ত বন্ধুর সাথে আলোচনা করতে পারেন। দেখবেন জীবনে সবাই কোন না কোন খারাপ সময় পার করেছে। কিংবা খারাপ সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আপনার একান্ত সঙ্গী হতে পারে একটা ডায়েরি। ডায়েরির পাতায় নিজের খারাপ অনুভূতিগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারেন। যা একান্তুই আপনার।

সবশেষে নিজেকে ভালো রাখবেন । নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। মনে রাখবেন দিনশেষে আপনি কারো প্রিয় মানুষ। নিজেকে হত্যা মানে কিন্তু এই প্রিয় মানুষগুলোর মনকে হত্যা।

লেখক: শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *