ইউজিসি’র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ন্যায্য হারে কোটা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আফিয়া কবির আনিলা। কিছুদিন আগেই তিনি তাঁদের নিকট এই আবেদন করেছিলেন, যা মঞ্জুর হওয়াতে তিনি তার কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন ইউজিসি’র প্রতি।

ছবি : সংগৃহীত

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ-কে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের ফলে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং তাঁরা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়ে একটি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে।’

তিনি চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর প্রতি সম্মান রেখে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটা সংরক্ষণ ও অন্যান্য নিয়মকানুন শিথিল করা সাপেক্ষে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বহু প্রতিক্ষীত আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ও সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে অবগত করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

আফিয়া কবির আনিলা রবিবার (০৮ ই নভেম্বর) ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাঁর পিতা আশফাক কবির এবং কমিশনের জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের সহকারী পরিচালক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ড. ফেরদৌস জামান আনিলার উচ্চশিক্ষায় সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। তিনি সকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আইন অনুযায়ী সুরক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ জানান। এর আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আফিয়া কবির আনিলা তথ্য অধিকার (তথ্য প্রাপ্তি সংক্রান্ত) বিধিমালার বিধি-৩ অনুসারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে ইউজিসি’র দায়িত্ব প্রাপ্ত তথ্য কর্মকতার কাছে আবেদন করেন।

 

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে আনিলার পরিবারের সংঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনিলার ‘ও এবং এ’ লেভেলে “ই” গ্ৰেড থাকায় শর্তসাপেক্ষে ভর্তির বিষয়টি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত জানায়। নিয়মানুসারে দুটি “ই” গ্ৰেড থাকলে কোন শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন না। আনিলা প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে এর প্রতিকার চেয়ে ইউজিসিতে তথ্য অধিকার বিধিমালা অনুসারে একটি আবেদন করেন। আনিলা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি দেশের একজন সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসাবে ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এঁর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে আইনানুযায়ী ন্যায্য হারে কোটা সংরক্ষণ করতে ০৩ রা নভেম্বর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ইউজিসি। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর গেজেট প্রকাশিত হয়। এই আইনের ৯ এর ‘জ ও ট’ ধারায় মেধার ভিত্তিতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ন্যায্য ও কার্যকরভাবে কোটা সংরক্ষণ এবং প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী চাহিদার ভিন্নতা বিবেচনাপ্রসূত তাদের সক্ষমতা নির্ধারণপূর্বক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লেখা এক পত্রে উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষিত করে মূলধারায় সম্পৃক্ত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিষয়টির সাথে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় জড়িত। কাজেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করণীয় অনেক কাজই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ন্যায্য হারে কোটা সংরক্ষণসহ ভর্তির নিয়ম-কানুন অপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের থেকে শিথিল করতে উচ্চ মাধ্যমিক বা এ-লেভেল পাশ করা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে বর্তমান প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ইউজিসি চেয়ারম্যান-এর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। এছাড়া, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানুয়ারি মাসে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে এক চিঠিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষিত করে মূলধারায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *