ইউরোপের যে শীর্ষ কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে

করোনাভাইরাসের কারণে এয়ারলাইনস ও অটোমোবাইলসহ ইউরোপের শীর্ষ কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। এতে ইউরোপজুড়ে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু এপ্রিল মাসেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ৩ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে। এক পরিসংখ্যানে এমনটাই জানিয়েছে ইইউর স্ট্যাট ( পরিসংখ্যান) এজেন্সি ইউরোস্ট্যাট। খবর ইউরো নিউজ।

এপ্রিলে ইউরোপে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা এতটা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও বহু বছর দেখা যায়নি মহাদেশটিতে। ফারলং স্কিম (কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো এবং বেতনের একটি অংশ সরকার কর্তৃক প্রদান) ইউরোপে করোনা মহামারিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষকে রক্ষা করেছে। তবে বাকিরা ভাগ্যবিড়ম্বিত।

ইউরোপের যেসব কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করছে:

এয়ারবাস (১০ হাজার কর্মী): করোনা ভাইরাসের কারণে বিমানের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে, ফলে নতুন বিমান বিক্রিও কমে গেছে। ইউরোপের বিমান তৈরির কোম্পানি এয়ারবাসের আয় ভীষণভাবে পড়ে গেছে। তাই কোম্পানিটি ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, অর্ডার বাতিল করা কিংবা বিলম্বিত হওয়ার কারণে তারা বিমান তৈরি এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনবে।

নিশান (২ হাজার ৮০০): জাপানি গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি নিশান জানিয়েছে, স্পেনের বার্সেলোনায় তারা তাদের কারখানাটি বন্ধ করে দেবে। এতে অন্তত ২ হাজার ৮০০ মানুষের চাকরি যাবে। এ খবরে বার্সেলোনায় কর্মীরা গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান এবং চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।

কোম্পানিটি জানায়, করোনাভাইরাস তাদের ব্যবসায় সীমাহীন চাপ তৈরি করেছে এবং এখন শুধু এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বাজারে চোখ তাদের।

রিয়ানএয়ার (৩ হাজার কর্মী): আইরিশ বিমান কোম্পানি রিয়ানএয়ার তাদের ১৫ শতাংশ কর্মী (৩ হাজার) ছাঁটাই করবে। কোম্পানির সিইও মাইকেল ও’লিয়ারি জানান, আগামী ১২ মাস টিকে থাকতে তারা এ কাজটি করবেন। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে বিমানের আয় কমে যাওয়ায় তারা এপ্রিল ও মে মাসে কর্মীদের বেতন ৫০ শতাংশ কম দিয়েছেন এবং এ কাজটি করতে হবে আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত।

মালবেরি (২৫ শতাংশ কর্মী): যুক্তরাজ্যের অভিজাত ফ্যাশন কোম্পানি মালবেরি তাদের ২৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করবে বলে জানিয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের উৎপাদিত হ্যান্ডব্যাগ ও চামড়াজাত সামগ্রীর বিক্রি কমে যাওয়ায় এই পথে হাঁটতে যাচ্ছে তারা। বেশিরভাগ কর্মী ছাঁটাই হবেন যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক, যেখানে কোম্পানির অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ (১২ হাজার কর্মী): করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াল থাবা পড়েছে বিমান কোম্পানিগুলোর ওপর। লকডাউনের কারণে সব দেশের শীর্ষ বিমান কোম্পানিগুলোর ওপর বিরাট প্রভাব পড়েছে। এতে তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এপ্রিল মাসেই কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, ৪২ হাজারের বিশাল বহরের মধ্যে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে।

ব্রিটিশ এয়ারলাইনসের প্যারেন্ট কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন গ্রুপ (আইএজি) জানিয়েছে, করোনার আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তারা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় থাকবে। আইএজির অন্যান্য এয়ারলাইনস ইবেরিয়া ও ভুয়েলিং (স্পেন) এবং লিনগাস (আয়ারল্যান্ড) কর্মী ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে।

রেনো (১৫ হাজার কর্মী): বিশ্বখ্যাত ফরাসি অটোমোবাইল কোম্পানি রেনোর গাড়ি বিক্রি আগেই কমে গিয়েছিল। করোনা ভাইরাস কোম্পানিটির জন্য নতুন আঘাত হয়ে আসে। তারা এখন টিকে থাকতে বিশাল কর্মী বাহিনী ছাঁটাই করবে। গত মাসে রেনো ঘোষণা দেয়, বিশ্বব্যাপী অন্তত ১৫ হাজার কর্মীকে বাদ দিতে হবে তাদের। এর মধ্যে ফ্রান্সেই ছাঁটাই হবে ৪ হাজার ৬০০ জন। বলাবাহুল্য, সরকারের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ইউরো ঋণ নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করবে রেনো।

ইজিজেট (৪ হাজার ৫০০): ব্রিটেনের অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল এয়ারলাইনস ইজিজেটও কর্মী ছাঁটাই করবে। তারা অন্তত ৪ হাজার ৫০০ কর্মীকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। অর্থাৎ, কোম্পানিটি তাদের মোট কর্মীর ৩০ শতাংশই বাদ দিচ্ছে।

ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (১০ হাজার কর্মী): বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ও দাম দুটিই কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলোর ওপর। বিপাকে পড়েছে ব্রিটিশ তেল জায়ান্ট ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামও। গত সোমবার (৮ জুন) তারা ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়। ইউরো নিউজ জানিয়েছে, এক ই-মেইল বার্তায় কোম্পানির সিইও বার্নার্ড লুনি কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা নিশ্চিত করেছেন এবং এর অধিকাংশ কাজটি চলতি বছরের মধ্যেই করবে তারা।

ভার্জিন আটলান্টিক (৩ হাজার কর্মী): ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারওয়েজের বাণিজ্যিক নাম ভার্জিন আটলান্টিক। তারা জানিয়েছে, ব্রিটেনে অন্তত ৩ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে এবং গ্যাটউইক এয়ারপোর্টে তাদের কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি টানবে।

টুই (৮ হাজার কর্মী): অ্যাংলো-জার্মান বিমান ট্রাভেল ফার্ম টুই ১৩ মে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী অন্তত ৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে তারা। অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস পর্যটন শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আঘাত এবং টুইও কখনো এত বড় সংকটের মুখোমুখি হয়নি। মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে মার্চ মাসে জার্মান সরকার কোম্পানিটিকে ১৮০ কোটি ইউরো ঋণ মঞ্জুর করে।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস (৫ হাজার কর্মী): মার্চ মাসে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস জানিয়েছিল, তারা কিছু কর্মীকে সাময়িকভাবে বাদ দেবে। তবে পরের মাসেই তারা ঘোষণা দেয়, অন্তত ৫ হাজার কর্মী স্থায়ীভাবে ছাঁটাই করা হবে। সুইডেন ও ডেনমার্কের মালিকানাধীন বিমান কোম্পানিটি জানায়, সুইডেনে ১ হাজার ৯০০, ডেনমার্কে ১ হাজার ৭০০ ও নরওয়েতে ১ হাজার ৩০০ কর্মী ছাঁটাই করা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *