ইদের আগে রেমিটেন্সে গতি

মহামারি করোনাভাইরাসের এ সংকটময় সময়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রবাসীদের কষ্টের অর্থ রেমিটেন্স। ঈদ সামনে রেখে দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি মে মাসের প্রথম ১৪ দিনে ৮০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় সমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঈদের মাস মে’র প্রথম ১৪ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে তা আগের মাস এপ্রিলের প্রায় ৭৪ শতাংশ। গত এপ্রিল মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই ঈদের আগে রেমিটেন্সে গতি আসে। তবে এবার ঈদের পাশাপাশি রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনার প্রভাবও পড়ছে। গত বছরের ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড রেমিটেন্স এসেছিল। আর প্রথম ১৪ দিনে এসেছিল ৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। এবার মহামারি করোনার মধ্যে প্রথম ১৪ দিনে মাত্র ৭ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে, তার সবগুলোতোই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফলে অনেক প্রবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরতে হয়েছে। যারা রয়েছেন তাদের অনেকে ঘরে আটকে থাকায় কাজ করতে পারছেন না। ফলে দীর্ঘদিন ইতিবাচক ধারায় থাকা এই সূচকটি গত কয়েক মাস ধরে পতনের ধারায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টানা কমছে রেমিটেন্স। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিটেন্স আসে ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। এরপরের মাস মার্চে আসে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আর এপ্রিলে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে নেমে আসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। এছাড়া এটি গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বনিম্ম ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

ঈদের কারণ মে মাসে রেমিটেন্সে কিছুটা গতি ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম ১১ দিনে ৫১ কোটি ২০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে, ১৩ মে পর্যন্ত আসে ৬৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর ১৪ মে তা ৮০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়ে। অর্থাৎ ১৪ মে বৃহস্পতিবার একদিনেই এসেছে ১১ কোটি ২০ লাখ ডলার।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে এক হাজার ৩৩০ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। সেখানে চলতি অর্থবছরের ১৪ মে পর্যন্ত এসেছে ১ হাজার ৫৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এদিকে, ঈদের আগে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ায় রপ্তানি আয় কমার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৮৪ কোটি ৩৯ লাখ (৩২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *