উচ্চ-মাধ্যমিক-শিক্ষার্থীদের পাশে চিলমারীর “মেধাবী কল্যাণ সংস্থা”

উচ্চ মাধ্যমিকে (প্রথম বর্ষ) ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের টাকার অভাবে বই কিনতে না পারায় কুড়িগ্রামের চিলামারী উপজেলার অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এক সেট করে নতুন বই সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়াতে চান ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট অলাভজনক একটি সংগঠন যার নাম “মেধাবী কল্যাণ সংস্থা”।

 

চিলামারী “মেধাবী কল্যাণ সংস্থা” টি মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে এসএসসি’তে ৪.৫০ গ্রেড পয়েন্ট পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে (প্রথম বর্ষ) ভর্তি হওয়া টাকার অভাবে বই কিনতে না পারা অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তথ্য বিবরণী চেয়ে তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট আপলোড করেন। পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম ও আবেদন জমা পড়ে সংগঠনটিতে। সেই সমস্ত তথ্য ও আবেদনের সত্যতা যাচাই-বাছাই করার পর প্রকৃত অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরন করা হবে আগামী রোববার দিন ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ বলে সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ নুরুল আলম জানান, সংগঠনের সকল সদস্যদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রদানকৃত অর্থ সঞ্চয় করে প্রতি বছর দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের শিক্ষা উপকরণের যাবতীয় সহায়তা দেওয়া, মাসিক উৎসাহমূলক শিক্ষাবৃত্তি সহায়তা দেওয়া, ফরম পূরণের টাকা সহায়তা দেওয়া, সহায়ক বই সহায়তা দেওয়ার মত কার্যক্রম সম্পাদিত করে থাকে এই সংগঠনটি।

তারা আরও জানান, দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধ করে তাদেরকে সমাজ তথা দেশ সেবার জন্য উপযুক্ত করে তোলাই মেধাবী কল্যাণ সংস্থার মূল লক্ষ্য। এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলা-ধুলার মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ, বয়স্কদের সেবাদান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে জনসচেতনতাকরণ এবং যেকোন ধরনের ভালো কাজে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে দেশের কল্যাণ সাধন উক্ত সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, মেধাবী কল্যাণ সংস্থা” সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকাল-২০১২ ইং সালে। মাত্র ২ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সংগঠনটির। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৩ জন সদস্য’র নিজস্ব অর্থায়নে ও সহযোগে সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭৩ জন।

সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন সুবিধাভোগি শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সুযোগ পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে-০৩, রুয়েট-০১, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে-০৩, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে-০১, হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে-০১, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে-০১, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে-০১, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে-০১ জন। এছাড়াও ০৩ জন মেয়ে সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ছে।

উল্লেখ্য আছে যে, মা হারা একটি শিশু মোসলেমা মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে।নিজ প্রচেষ্টায় সে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি’তে এ+প্রাপ্ত। এইচএসসি পরীক্ষার আগে পুষ্টিহীণতায় ভোগায় অনেকদিন অসুস্থ ছিল সে! হাল ছেড়ে না দেওয়া সেই অসহায় মেয়েটির পাশে এসে দাড়ায় এই সংগঠন। এই সংগঠনটির (৫ বছর যাবৎ) সহায়তায় ২০১৯ সালে জামালপুর সরকারী নার্সিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় এই মেধাবী কন্যা মোসলেমা।

চিলমারী রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার বলেন, মেধাবী কল্যাণ সংস্থা নামের সংগঠনটি দীর্ঘ দিন ধরে কিছু চমৎকার কাজের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে লেগে আছে।তারা মূলত এলাকার অসহায়-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণে সহায়তা প্রদান, চিকিৎসায় অর্থের যোগান, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা দিয়ে আসছে। এছাড়া করোনায় জনসচেতনতামুলক বিভিন্ন প্রচার প্রচারনাসহ নানান সহায়তা প্রদান এবং বন্যার্তদের খাবারের যোগানসহ নানানমুখী সহায়তা প্রদান করে আসছে। সংগঠনটির প্রতিটি কার্যক্রম আমার খুবই ভালো লাগে। শিক্ষার্থীদের বই দিয়ে সহায়তা প্রদান করা খুবই উৎসাহপ্রদান মূলক উদ্যোগ। এরকম সংগঠন যতোই তৈরী হবে ততোই অসহায় সাধারন মানুষ উপকৃত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন বলে জানান।

২০১৫ সাল থেকে সংগঠনটি প্রাথমিক প্রজেক্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবছর ৫০-৬০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দেওয়ার পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদানে সহায়তা করা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ ইং সালে প্রাথমিক শাখার ৫৬ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর দায়িত্ব নেয় এই সংগঠনটি। তাদের বাবা-মা যাতে তাদেরকে শিশুশ্রমে আবদ্ধ না করে সেজন্য তাদেরকে সকল শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করে থাকে এই সংগঠন। অফিসে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দান করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর মাধ্যমে পাঠদানে সহায়তা করা হয়ে থাকে।

“মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন” হিসেবে নিয়মিত খেলাধুলোর আয়োজন করে তা বিভিন্নভাবে প্রচার করে থাকে সংগঠনটি। তাছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নিয়ে ২০ জনের দুটি আলাদা টীম গঠন করে স্থানীয় কোচ মারফত সারা বছরব্যাপী ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখেছে। সংগঠনটির সহযোগিতায় প্রাথমিক শাখার কিশোরী ফুটবলার শারমিন বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার জন্য, জেলা টীমে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
সংগঠনটি জাতীয় দিবসগুলোতে কর্মকান্ড অব্যাহত রেখে এই বিশেষ দিবসগুলোর তাৎপর্য সবার কাছে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।

করোনার শুরু থেকে জনসচেতনতামুলক নানা রকম প্রচার প্রচারনা চালানোসহ জীবাণুনাশক স্প্রে করা, মাস্ক, সাবান বিতরণ করা এবং অসহায় দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সামগ্রী প্রদান করে সংগঠনটি । এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক উচ্চ শ্রেণীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সহায়তায় হতদরিদ্র অনেক পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে তারা।

এবারের দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় প্রায় ১ মাস ব্যাপি বানভাসি মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছান সংগঠনটির সদস্যরা। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করে সংগঠনটি।এছাড়াও এই বানভাসি অসহায় মানুষগুলোকে সাস্থ্য সচেতনতা মূলক সকল প্রকারের তথ্য প্রদান করে থাকে এই সংগঠনের সদস্যরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *