এক নজরে বাজেট ২০২০-২১

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে তার দ্বিতীয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ২২তম এবং দেশের ৪৯তম বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এবারের বাজেটে মহামারি কোভিড-১৯ রোধকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এক নজরে বাজেট

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাজেটের শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’। বাজেটে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

আর এনবিআর বর্হিভূত কর ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় ও বৈদেশিক অনুদান মিলে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ৩৮ কোটি টাকা বেশি।

৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রস্তবা করা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। যা ঘাটতি জিপিডি অনুসারে শতকরা ৬ শতাংশ। এর আগের বছর এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশ থেকে ঋণ নেবে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে ৮৮ হাজার কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও অনান্য খাত থেকে ঋণ নেবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ: ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রস্তবা করা হয়েছে। অথচ বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে; আর আগামী বছরে তা হতে পারে ১ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের সুফল পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে। সেজন্য নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রণোদনা: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। এছাড়া শিল্প খাতের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি এবং কৃষি খাতের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা রাখা হয়েছে।

কমছে করপোরেট ট্যাক্স: বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘ ৫ বছর পর করপোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করপোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়।

করপোরেট ট্যাক্সের হার কমানো হলেও পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, মোবাইল অপারেট ও সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স হার অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানা গেছে।

কমছে টার্নওভার ট্যাক্স: ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্সের হার কমানো হচ্ছে। এটি ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হচ্ছে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা এবং টার্নওভারের ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা থাকছে। তবে সব শ্রেণির ব্যবসায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ: আগামী বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশের নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। এ ধারা অনুযায়ী, আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত স্টক, শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সরকারি বন্ড এবং ডিভেঞ্চারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে, ৩ বছরের জন্য এ বিনিয়োগ করতে হবে। এর আগে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করলে করদাতাকে সাধারণ হারে কর পরিশোধ করতে হবে।

বাড়ছে করমুক্ত আয়ের সীমা: দীর্ঘ ৫ বছর পর ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। নারী, প্রতিবন্ধী ও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের অব্যাহতির সীমাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে। অন্যদিকে ব্যক্তি শ্রেণির কর হারও কমানো হচ্ছে। ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে করের বোঝা কমবে। তবে অপরিবর্তিত থাকছে ন্যূনতম কর হার।

অপ্রদর্শিত আয় জমি-ফ্ল্যাট বৈধের সুযোগ: আয়কর রিটার্নে দেখানো নেই এমন অপ্রদর্শিত বা কালো টাকায় কেনা জমি-ফ্ল্যাট বৈধ এবং নগদ টাকা, ব্যাংক আমানত এবং সঞ্চয়পত্র দেখানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আগ্রহীদের এলাকা ভেদে বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট অঙ্কের কর দিতে হবে। অভিজাত এলাকায় জমি-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বেশি হারে কর দিতে হবে। অন্যদিকে ব্যাংকে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিট এবং সঞ্চয়পত্র রিটার্নে দেখানো যাবে। এ জন্য মোট অঙ্কের ১০ শতাংশ কর দিতে হবে।

কালো টাকা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের পরিসর বাড়ছে: আগে শুধুমাত্র কালো টাকা বিনিয়োগ করে আবাসিক ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ ছিল। বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ (বিবিবিবিবি) ধারা সংশোধন করে কমার্শিয়ালসহ সব ধরনের ফ্লোর কেনার ক্ষেত্রে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট অঙ্কে কর পরিশোধ করতে হবে।

কর অবকাশ আওতা বাড়ছে: বাজেটে নতুন শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ফাইবার প্রোডাকশন, ন্যানো টেকনোলজি বেইজড প্রোডাক্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার প্রোডাকশন, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আগে ২৬টি শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *