করোনায় ভালো নেই বাদাম বিক্রেতা আব্দুর রব

বাদাম বিক্রেতা আব্দুর রব। ছবি: মো. মাসুদ রানা।

মহামারি করোনায় ভালো নেই বিশ্ব, ভালো নেই মানুষ, ভালো নেই কুড়িগ্রামের বাদাম বিক্রেতা মোঃ আব্দুর রব। স্কুল-কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়  বন্ধ হবার উপক্রম তার বাদাম বিক্রি, থেমে যাচ্ছে সংসারের চাকা।

মঙ্গলবার (২৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা শহরের জিয়া বাজার সংলগ্ন পুরাতন থানা পাড়া এলাকায় বাদাম বিক্রির সময় আব্দুর রবের সাথে কথা বলে মর্নিং নিউজ বিডির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা

মোঃ আব্দুর রব (৬০)। পেশায় একজন বাদাম বিক্রেতা। তিনি এ পেশায় নিয়োজিত আছেন ৩৫ বছর ধরে। জীবনের দীর্ঘ সময় এ পেশায় নিয়োজিত থেকে যুবক বয়স পাড়ি দিয়ে এখন রয়েছেন বার্ধক্যে। এই বৃদ্ধ বয়সেই তিনি ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন যানবাহন যোগে চলে আসেন জেলা শহরে বাদাম বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু চলমান অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে স্কুল, কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্রেতা সংকটে বাদাম বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। ক্রেতার অভাবে পর্যাপ্ত বাদাম বিক্রি করতে না পারায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি ও তার পরিবার। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের দড়িচর পাঁচপাড়া গ্রামে।

আব্দুর রবের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধ আব্দুর রব প্রতিদিন সকালে নিজ বাড়ী থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে জেলা শহরে আসেন বাদাম বিক্রি করতে। আগে স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ খোলা থাকায় প্রতিদিন অনায়াসে ৪ কেজি বাদাম বিক্রি করতে পারতেন।  এতে তিনি যে আয় হতো মোটামুটি চলতে পারতেন। কিন্তু অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় বাদাম বিক্রিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই পর্যাপ্ত বাদাম বিক্রি করতে না পারায় লাভ কম হওয়ায় জীবিকা নির্বাহ বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে তার। এতে করে পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। তিনি প্রতি কেজি বাদাম ৮০ টাকা দরে পাইকারী দোকান থেকে ক্রয় করেন। এবং প্রতি ১শ গ্রাম বাদাম ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন ২০ টাকা দরে। এতে করে তার প্রতিদিন আয় হয় ২৫০-৩০০ টাকা। এই সামান্য আয় থেকে তার প্রতিদিন বাড়ী থেকে আসতে ও যেতে যাতায়াত খরচ লাগে ১২০ টাকা। আয়ের ৩০০ টাকা থেকে যাতায়াত খরচ বাবদ ১২০ টাকা ব্যয় হলে তার অবশিষ্ট থাকে ১৮০ টাকা। এই ১৮০ টাকায় তার ও পরিবারের ভরণ পোষন বহন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

পুরাতন থানা পাড়া এলাকার দোকানদার- মমিন, ভোলা ও মাঈদুল জানান, আমরা দীর্ঘ দিন থেকে বৃদ্ধ আব্দুর রবকে এই এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে দেখছি। কিন্তু ভাইরাসের কারনে কাস্টমারের অভাবে বাদাম বিক্রি ভালো হচ্ছে না তার।

আব্দুর রব জানান, আমি একজন বয়স্ক মানুষ। প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করে আসছি। বয়সের ভাড়ে আর চলতে পারিনা বাবা। তার মধ্যে বাদামের ডালা কাঁধে নিয়ে পুরো শহর ঘুরতে হয়। ভাইরাস আসার পর থেকে স্কুল কলেজ বন্ধ হওয়ায় বেচা বিক্রি আর আগের মতো নেই। আমার চার মেয়ে। আমি ছাড়া আর উপার্জন করার কেউ নেই। বর্তমানে পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করছি।  ভাইরাস আমাদের পেটে লাত্তি দিয়ে মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, বর্তমানে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। মানুষের কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়েছে। মানুষজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জীবিকা নির্বাহের কথা বলা হচ্ছে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে আমরা মানুষকে নানা সহায়তা দিয়েছি। ঐ বাদাম বিক্রেতা কখনো আমার কাছে আবেদন করেনি। যদি আবেদন করে তাহলে সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *