করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার আরও কঠোর হবে: ওবায়দুল কাদের

দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সরকার আরও কঠোর হবে। পরিস্থিতি জনস্বার্থের বিপরীতে চলে গেলে সরকারকে বাধ্য হয়ে আবারও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সোমবার সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে সেতু বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মত বিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকলেও লকডাউন শিথিল করছে। কোথাও কোথাও তুলে নিয়েছে। পবিত্র মক্কা-মদিনা-মসজিদুল আকসাও মুসল্লিদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। জীবনের পাশাপাশি জীবিকা দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকলে জীবনের গতিপথে নেমে আসবে স্তব্ধতা, অর্থনীতি হয়ে পড়বে স্থবির। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বেছে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এই সংকটে অনিবার্য প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। নিজের সুরক্ষা প্রকারান্তরে পরিবার, সমাজ ও সহকর্মীদের সুরক্ষা দেবে। তাই আসুন, প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে সচেতন ও সুরক্ষিত থাকি। ঘরকে গড়ে তুলি সুরক্ষার দুর্গ। এমন সংকটে সবার পাশে আছেন সাহসী নেতৃত্ব শেখ হাসিনা। তার প্রতি আস্থা ও ভরসা রাখুন। এ নিদানকাল কাটিয়ে ভোরের আলোয় দশ দিগন্ত আলোকিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

গণপরিবহন চালু ও ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে গাড়ি চালানো শুরু হয়েছে। সরকার বাস্তবতার প্রয়োজনে ভাড়া সমন্বয় করেছে এবং শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চলছে। মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি ও শর্ত মেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভিজিলেন্স টিম ও মোবাইল কোর্টসহ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে অর্ধেক আসন খালি রাখা এবং বর্ধিত ভাড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তদারকির আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, কেউ অতিরিক্ত যাত্রী হবেন না, অর্ধেক আসন খালি রাখুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সংক্রমণ থেকে বাঁচুন, অপরকে বাঁচান। হুড়োহুড়ি, বাড়তি যাত্রী হওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা এ সংকটকে আরও ঘনিভূত করতে পারে। এই সংকটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম আর নির্বাচনে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়। দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে না থেকে এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের জনরোষ থেকে বাঁচাতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।

তিনি বলেন, বিএনপির নেতাদের মধ্যেও সমন্বয় নেই। তারা নিজেদের অফিসে নিজেরা আগুন দেন, কর্মীরা নেতাকে পিটান। যারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারেন না, তারা আবার সমন্বয়ের কথা বলেন কীভাবে? এদেশে দুর্যোগ গণমানুষের পাশে সবার আগে আওয়ামী লীগ ছুটে যায়। এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকার অপচেষ্টা আর মিথ্যাচার বিএনপির ঐতিহ্য।

কাদের বলেন, করোনা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী ও মানবিক প্রয়াস বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। আর বিএনপি খুঁজে পাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। নিজেরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্বহীন বক্তব্য রাখছে। সংকটে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সংকটের শুরু থেকে সরকার সব দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সংক্রমণ রোধ, আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং টেস্টিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আকস্মিক এই সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সংকট সমাধানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। সরকার কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত চিকিৎসা নেটওয়ার্ক সমন্বয় করাসহ সচেতনতা তৈরিতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। খাদ্য ও আর্থিক সহায়তাসহ নানা উদ্যোগের ফলে আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি।

এ সময় সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনসহ সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *