কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ২২ মিলিয়ন ডলার দিল যুক্তরাষ্ট্র

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার প্রতিরোধের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টাগুলোতে সম্পূরক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২২ মিলিয়ন ডলারের (২ কোটি ২০ লাখ) বেশি অনুদান দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ মে) ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) মাধ্যমে এই ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এই তহবিল বিগত ২০ বছরে বা্ংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলারের অধিক স্বাস্থ্য সহায়তার ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য মানসম্পন্ন জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

কোভিড-১৯’এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সারা বিশ্বে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা খাতে এবং মানবিক, অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বিশেষত সরকার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এই মহামারি মোকাবিলায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই তহবিলের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাদির সুরক্ষা, পরীক্ষাগার বৃদ্ধি, রোগ পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত সাড়া প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ১২০টি দেশে মানুষের জীবন বাঁচবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলার প্রস্তুতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে যেসব ক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে সেগুলো হলো: রোগনির্ণয় ও পরীক্ষাগারের সক্ষমতা জোরদার করা; আক্রান্তের ব্যবস্থাপনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চর্চা উন্নতকরণ; সরবরাহ ব্যবস্থা ও দ্রব্যসামগ্রী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করা; এবং জ্ঞান বাড়ানো এবং গুজব ও ভুল ধারণা দূর করতে ঝুঁকি বিষয়ক তথ্য যোগাযোগ বার্তা প্রচার জোরদার করা।

বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১ বিলিয়ন ডলারের অধিক স্বাস্থ্য সহায়তার ধারাবাহিকতায় প্রদত্ত এই তহবিলের মধ্যে রয়েছে সারা বাংলাদেশের ডাক্তারদের জন্য কোভিড-১৯ বিষয়ে বিনামূল্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণ।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে বলা হয়েছে- ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃক যৌথভাবে বাংলাদেশি ডাক্তারদের জন্য কোভিড-১৯ বিষয়ে অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স প্রণয়নের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়ন ও সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়িত সাম্প্রতিক অনেক উদ্যোগের অন্যতম উদাহরণ। এ কোর্সটির মাধ্যমে ডাক্তারগণ কোভিড-১৯ বিষয়ক দরকারি তথ্য পাবেন যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পেশাজীবী হিসেবে নিজের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করার পন্থা। সরকারের ই-লার্নিং কার্যক্রম মুক্তপাঠ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকে ডাক্তারগণ বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়-এর সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম এবং অনলাইন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিয়োজিত বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাভুক্ত ও ক্যাবিনেট বিভাগ সমর্থনপুষ্ট অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)।

অনলাইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন, রমজান আমাদের এই সংকট মোকাবিলায় নিয়োজিত সামনের কাতারের কর্মীদের সম্পর্কে ভাবা এবং তাদের ধন্যবাদ জানানোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা প্রতিদিন অসাধারণ সেবাকাজ করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, পুলিশ, মুদি, ওষুধের দোকান এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা লোকেরা। আমরা যেন নিজের এবং পরিবারের সবার ভালো থাকার জন্য যা যা দরকার তা পাই সেটি নিশ্চিতে কাজ করছেন তারা। আমি এর মধ্যে সাংবাদিকদেরও যোগ করবো। বিশেষ করে সঙ্কটের সময়ে যে কোনো প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের যা প্রয়োজন আপনারা তা যোগান। তা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, প্রকৃত ঘটনা এবং সত্য। সাংবাদিক, আলোকচিত্র সাংবাদিক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজটি পালন করার সময় অনেক সময় ত্যাগ স্বীকারের ব্যাপার থাকে, যেমনটি বাংলাদেশেও ঘটে। আপনারা সবাই প্রকৃত নায়ক এবং আমাদের অন্তরস্থ কৃতজ্ঞতা প্রাপ্তির দাবীদার।

মিলার বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সারাদেশের চিকিৎসকদের জন্য কোভিড-১৯ বিষয়ক একটি অনলাইন কোর্স চালু করছে। এই কোর্সটি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করার সময় যেসব সতর্কতার বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকদের সহায়তা করবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমাদের সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য মানসম্পন্ন জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *