করোনা যুদ্ধে হেরে গেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম  রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন , তাঁর বয়স ছিল ৭২ বছর।

তার ছেলে সুমন মাহবুব ফেসবুকের একটি পোস্টে জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যা ০৭:২৫ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায়  মারা গেছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা  তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেছেন: “মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনায় অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একজন যোদ্ধা ছিলেন। ”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জাতি সর্বদা দেশের আইনী অঙ্গনে তার অবদানের কথা স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “তিনি সর্বদা আইন এবং ন্যায়বিচারের জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন যা যথাযোগ্য শ্রদ্ধার সাথে চিরকাল  স্মরণ করা হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মামলায় আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থাকা মাহবুবে আলম সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা মামলাসহ সর্বোচ্চ আদালতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধ মামলার মতো ঐতিহাসিক অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন।

তিনি একাত্তরের একাধিক যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বিশেষত আবদুল কাদের মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং মতিউর রহমান নিজামির বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, মাহবুবে আলম ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মৌছামান্দ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৬৯ সালে লোক প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন মাহবুবে আলম। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৮০ সালে আপিল বিভাগে আইন পেশা পরিচালনার অনুমতি পান। ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মাহবুবে আলম। এ ছাড়া তিনি ১৯৭৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লির ‘ইনস্টিটিউট অব কনস্টিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ’ থেকে সাংবিধানিক আইন ও সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাহবুবে আলম। এর মধ্যে ১৯৯৩-৯৪ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৫-২০০৬ মেয়াদে তিনি আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি মাহবুবে আলম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর থেকে টানা ১২ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই সাথে পদাধিকার বলে তিনি আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *