কুড়িগ্রামে দির্ঘায়িত বন্যায় বিপাকে ৪ লাখ বানভাসি, পানিতে ডুবে মৃত্যু ১৯

কুড়িগ্রামে টানা ১ মাসের দীর্ঘায়িত বন্যায় চরম কষ্টে দিন পার করছে প্রায় ৪ লাখ বানভাসী মানুষ। হাতে কাজ ও খাদ্য মজুদ না থাকায় বন্যা কবলিত হতদরিদ্র পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। চরম দুর্ভোগে থাকলেও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ বন্যা দুর্গত মানুষজনের।

শতশত পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিলেও দুর্ভোগ বেড়েছে তাদেরও। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বেশির ভাগ মানুষ পানিতে তলিয়ে থাকা ঘর-বাড়িতে বসবাস করে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন। এসব এলাকায় মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুর কষ্ট দ্বিগুন বেড়েছে।

রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ সরবেশ আলী জানান, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ৬০টি বাড়ী সম্পূর্ণ ও ৯০টি আশিক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে শুকনো খাবারের সংকট ও চুলা জ্বালাতে না পারায় অনাহারে, অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন বানভাসি মানুষজন।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের মনছের আলী জানান, টানা ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যার মধ্যে পড়ে আছি। কাজ-কাম নাই। ঘরে খাবার নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানও কিছু দেয় না। বন্যার আগে ভাইরাসের কারনে তো কোথাও যেতেও পারিনি। খুব কষ্টে আছি।

কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে আশ্রয় নেয়া এনতাজ আলী জানান, ১৫ দিন ধরে এই সড়কে গরু, ছাগল নিয়ে অবস্থান করছি। নিজের খাবারের কষ্ট। তার উপর গরু, ছাগলের খাবার। সবমিলে খুব কষ্টে দিন পার করছি।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকায় পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নলকুপ।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জনই শিশু।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ২ হাজারেরও বেশি পুকুরের সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল সম্পুর্ণ রপে নষ্ট হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, এ পর্যন্ত জেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সন্ধা ৬ টার তথ্য অনুযায়ী সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *