বৃষ্টির পানি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৭৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। ফলে জেলার সদর উপজেলা, চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর ও নাগেশ্বরীসহ ৮টি উপজেলায় নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় আড়াই শতাধিক চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এ অবস্থায় নিচু এলাকার মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চরের আহাদ আলী, রাশেদা ও সুমি জানান, আমরা নদীগর্ভে ৪-৫ বার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। বন্যার পানি আসার কারনে বাড়ী ঘর ভেঙ্গে উচু জায়গায় গিয়ে অবস্থান নিচ্ছি। গরু ছাগল হাস মুরগি নিয় খুবই বিপাকে পড়েছি। রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করতে না পারায় না খেয়ে আছি। কোন কাজকর্ম করতে পারছিনা
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুর এলাকার আশরাফুল, সাঈদুর ও কাশেম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানির স্রোতের গতি তীব্র হওয়ায় আমাদের এলাকার অনেক বাড়ীঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ১০-১৫ মিনিট পর পর একটি করে বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আবু হানিফা জানান, আমার ইউনিয়নের ৪০ হেক্টর জমির আউশ, ৭ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৮ হেক্টর জমির সবজি, ৩০ হেক্টর জমির তিল, ৭৫ হেক্টর জমির চিনাসহ ২শ হেক্টর জমির পাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে এবং আনুমানিক ৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নতুন নতুন এলাকার বীজতলাসহ ফসল পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: করোনায় মারা গেলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর স্ত্রী
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ধরলা ও তিস্তার পানি কমে গেলেও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য জেলার সবকটি উপজেলায় মোট ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরনের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।