কোভিড-১৯ মোকাবেলায় উদ্যোক্তা উন্নয়নে বি’ইয়া‘র অনলাইন কার্যক্রম

বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নের কথা বললে যে প্রতিষ্ঠানের নাম আসে সে হলো বি’ইয়া-বাংলাদেশ ইয়ূথ এন্টারপ্রাইজ অ্যাডভাইস এন্ড হেল্পসেন্টার (বি’ইয়া)। কোভিড-১৯ বাংলাদেশে হানা দেওয়ার পর থেকেই তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে ঘরে থেকেই ব্যবসা বাস্তবায়নে অনলাইন প্লাটফর্ম কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে সেই লক্ষ্যে অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ, ওয়েবিনার সেশন, অনলাইন মেন্টরিং এবং ব্যবসার সমস্যা সংক্রান্ত সমাধানের সেবা প্রদান করছে বি’ইয়া।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে আইকেয়া ফাউন্টেশন ও ওয়াইবিআই’র সহযোগিতায় এক্সেলারেটিং ইয়ূথ লেড-বিজনেস ইন ডিজিটাল এরা প্রকল্পের আওতায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ও সিরাজদীখান উপজেলার প্রায় ১০০০ তরুণ উদ্যোক্তার ব্যবসায়িক ডিজিটাল দক্ষতা বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তবে, গত মার্চ থেকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রকল্পের কার্যকমে পরিবর্তন আনা হয়। ফলে, গত মে মাস থেকে  গ্রামীণ ও শহর এলাকার কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারীর প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা  অনলাইনে ই-কমার্স এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং, এ্যাডভান্সড ডিজিটাল স্কীল প্রশিক্ষণ, অনলাইন মার্কেটিং, অডিও-ভিডিও কনটেন্ট তৈরি, অনলাইন কাস্টমার সেবা, অনলাইন প্রমোশন ও যোগাযোগ, সরকারি প্রণোদনা প্রাপ্তি উপায়, অনলাইন ব্যবসা পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সেবা পেয়েছে। এর ফলে তরুণ উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে অনলাইনে নিজের ব্যবসা স্থানান্তর করার কৌশল ও আত্নবিশ্বাস পাচ্ছে যা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অন্যান্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলো সঞ্চার করেছে।

কোভিড-১৯  মোকোবেলায় অনলাইনভিত্তিক কার্ক্রম পরিচালনা বিষয়ে বি’ইয়া’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মেহেদী হাসান কিংশুক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে আগের মত উদ্যোগ বাস্তবায়ন অন্তত আগামী একবছর সম্ভব নয় তাই আমাদেরকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার করতে হলে অনলাইনের কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যেই আমরা সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা এই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রযোজনীয় বিষয়গুলো অতি সহজ করে অনলাইনে বাস্তবায়ন করছি।  এরই ধারাবাহিকতায়, বি’ইয়া এই প্রকল্পের আওতায় নিয়মিতভাবে অফিস চলাকালীন সময়ে অনলাইনে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান বা নির্দেশনা প্রদানে এসএমই তথ্য সেবা পরিচালনা করছে। সেই সাথে শনি থেকে বৃহস্পতিবার দিন এবং রাতে বি’ইয়া পরিচালনা করছে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য  প্রশিক্ষণ, ওয়েবিনার এবং অনলাইন মেন্টরিং কার্যক্রম। এই মেন্টরিং কার্যক্রমের মাধমে একজন তরুণ উদ্যোক্তা একজন অভিজ্ঞ পেশাজীবির সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। অভিজ্ঞ মেন্টররা এই প্রথম অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রকল্পের তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টরিং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যা একজন তরুণ উদ্যোক্তার জন্য ভীষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

মেন্টরিং সেবা প্রসঙ্গে সম্ভাবনাময়ী তরুণ উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, আমি ব্যবসা বুঝতাম কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার জন্য আমি ব্যবসায় লোকসান করতাম। কিন্ত যখন থেকে মেন্টরের সাথে যুক্ত হলাম তখন থেকে আমি আমার ব্যবসাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। আমার মেন্টর আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহস যুগিয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার

অনলাইন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পর আরেক এক সম্ভাবনাময়ী তরুণ উদ্যোক্তা ড চিং চিং বলেন, আমি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে বি’ইয়া’র সহযোগিতা পেয়েছি। আমি ওয়াইবিআই’র বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের সাথে  ১৫ দিন ব্যাপী অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে জানতে পেরেছি আমরা বিশ্বের অন্যান্য উদ্যোক্তার চেয়ে কম নই ।  আত্নবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা আর সঠিক লক্ষ্য থাকলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। আমি সেই আত্নবিশ্বাস পেয়েছি বি’ইয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমে  অংশগ্রহণ করে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টর ও জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা মাসুদ রানা মিঠু বলেন, আমি বি’ইয়া’র তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টর। আমি এই মেন্টরিং কাজটি খুব উপভোগ করি। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝি তরুণদেরকে এগিয়ে নিতে একজন ব্যবসায়িক গুরু বা মেন্টর কত প্রয়োজন। আমি যা শিখেছি তা ঠেকে শিখেছি, আমাকে কেউ পথ দেখায়নি। তাই আমি মনে করি আমার দায়িত্ব হলো তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে প্রয়োজনীয়  বুদ্ধি, পরামর্শ, তথ্য ও নেটওয়াকিং এর মাধ্যমে সহযোগিতা করা , এগিয়ে যেতে সাহায্য করা। এতে বেকারত্ব কমবে, তরুণরা এগিয়ে যাবে এবং আমি মানসিকভাবে শান্তিতে থাকবো। আর ভালো লাগে তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনে আমার সাথে মিলিত হয়ে বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করতে পারছে।

‘‘চাকরি প্রার্থী হবে চাকরিদাতা’’-এই শ্লোগান নিয়ে বি’ইয়া’র পথ চলা শুরু হয় ২০০৭ সালে এবং ২০০৯ সাল থেকে বি’ইয়া, ইয়ূথ বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল-এর নেটওয়ার্ক সদস্য হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে আইকেয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গ্রামীণ ও শহরের তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সামাল দিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা এদেশের উদ্যোক্তা উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *