ছেলের পুলিশি ক্ষমতায় বাবা গড়ে তুললেন পাহাড় খেকো চক্র

ছবি: মর্নিং নিউজ বিডি

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলাধীন শিলখালীর আলেকদিয়া পাড়ার মৃত মুসা আলীর ছেলে দলিলুর রহমান। তার ছেলে আজমগীর চাকরি করেন বাংলাদেশ পুলিশ এ। ছেলের পুলিশি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাবা গড়ে তুলেছেন এক পাহাড় খেকো চক্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিলখালী ছৈয়দ নগর এলাকার আবুল শামার ছেলে যুবদল নেতা রাশেদ, মাঝের ঘোনা এলাকার মৃত বেলাল উদ্দিনের ছেলে আবু তৈয়ব, মৃত আবদু ছালামের ছেলে মো. সোহেল ও মৃত করিমদাদের ছেলে জকরিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালীদের নিয়ে দলিলুর রহমানের পাহাড় খেকো চক্র। এই চক্রটি প্রকাশ্য দিবালোকে পাহাড় কেটে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটালেও কোন তৎপরতা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রশাসনের চোখের সামনেই কাটা হচ্ছে এসব পাহাড়। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে গেলে দলিলুর রহমান তার ছেলে পুলিশের ভয় দেখায়। উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও থানা প্রশাসনকে বারবার পাহাড় নিধনের বিষয়ে অবগত করা হলেও প্রতিকার স্বরূপ কোন ধরণের ব্যবস্থা তারা নিতে পারেনি। যার প্রেক্ষিতে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন দলিল গং পাহাড় খেকো চক্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিলখালীর মাঝের ঘোনা এলাকায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দিনেদুপুরে সাবাড় করা হচ্ছে পাহাড়। প্রায় ডজনখানেক ট্রাক সে মাটি নিয়ে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলায়। পাহাড় কাটতে গিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বড় বড় গাছ। যার ফলে বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা নিয়ে তীব্র ঝুঁকির মুখে বসতি গড়ছে ওই জনপদের মানুষ।

এদিকে পাহাড় কাটার ভিডিও চিত্র ও প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের।

শনিবার (৮ আগস্ট) পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমা ও বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লার নেতৃত্বে একদল পুলিশ শিলখালীর মাঝেরঘোনা এলাকায় গিয়ে পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেন। একই সাথে এ ঘটনায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করার উদ্যোগ শুরু করেন।

এবিষয়ে পাহাড় খেকো চক্রের অন্যতম যুবদল নেতা রাশেদ দম্ভোক্তি করে বলেন, তাদের সাথে পুলিশে চাকরি করে এমন এক ব্যক্তির পিতা রয়েছে। তাদের কিছুই হবেনা।

পুলিশ ছেলের পরিচয় দিয়ে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। পুলিশ সদস্য আজমগীরের নাম ভাঙিয়ে তাঁর বাবার এসব অবৈধ কার্যকলাপের বিষয়ে তাকে জানানো হবে।

দলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তার মেঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা বলেন, পাহাড় নিধনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুতি চলছে।

উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমা বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাহাড় কাটার দায়ে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

আরও পড়ুন: ময়মনসিংহে বাস-সিএনজির সংঘর্ষে নিহত ৭

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাত বলেন, “পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

উল্লেখ্য, পাহাড় কেটে মাটিগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা বেশ কয়েকটি ইটভাটায়। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্র বিহীন এসব ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি মাটি ও বনাঞ্চলের কাঠ।

এসকল অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল ট্রাকের মালিকদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার কথাও জানায় স্থানীয়রা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *