জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব ও ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

কথিত আছে যে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা হচ্ছে সাংবাদিকতার আতুরঘর। সংবাদ সংগ্রহ, নির্বাচন কিংবা লেখায় আনাড়িপনার ছাপ থাকলেও সাংবাদিকতার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকেই একজন নিজেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তোলেন। সেই ভালোবাসা বা টান থেকেই নানা সংকটের মধ্যে থেকেও এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব সবসময় জবির সকল সংবাদ পাঠকের কাছে সবার আগে পৌঁছে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশীরভাগ সময় ক্লাস, পরীক্ষা লেগেই থাকে। এই একাডেমিক ব্যস্ততার মাঝেই গোয়েন্দাদের মত আমাদের ২৪ ঘণ্টা চোখ-কান খোলা রেখে ক্যাম্পাসে পূর্ণ নজরদারী রাখতে হয়। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতায় এক অন্যরকম আনন্দ আছে, জীবনকে উপভোগ করা যায় । চ্যালেঞ্জিং হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। নিজেকে দক্ষ, সৎ এবং সাহসী হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম পন্থা হচ্ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব আমাদের একটি পরিবার। দুই সপ্তাহ পরপর আমাদের কার্যকরী মিটিং থাকে। সেখানে শুধু যে সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা হয় তা নয়, পেশাদারিত্বের ছাপ থেকে বেরিয়ে এসে সমসাময়িক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। কখনো আমরা মেতে উঠি আড্ডায়, জবির মাসুক চত্বর কিংবা কাঠাল তলায় চলে আড্ডা। আড্ডার ছলে কথা হয় ক্যারিয়ার নিয়ে, কখনো বা টিএসসিতে চা খেতে খেতে নিছকই চলে আড্ডা। আবার কখনো গানে গানে ছড়িয়ে পড়ে তারুণ্যের উন্মাদনা। কখনো আমরা বেরিয়ে পড়ি নতুন কিছু দেখতে। কখনো বা দল বেঁধে খাওয়াদাওয়া করা হয়। আবার কখনোবা চলে যাই এক দিনের ট্যুরে।

আমাদের প্রেসক্লাবের সদস্যরা সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক কাজ কর্মের সাথে জড়িত রয়েছেন। সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে পাশে দাড়াচ্ছেন অসচ্ছল মানুষদের পাশে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে সকল ধরণের সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত আছেন তারা।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বাহ্যিক দিক দিয়ে অনেকের কাছে শখের মনে হলেও এর পদে পদে রয়েছে চ্যালেঞ্জ। সত্য প্রকাশে অনেক ক্ষেত্রে নিজের কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয় । প্রসাশনের বিভিন্ন চাপসহ অন্যান্য চাপ মাথায় রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হয়। শুরুতে গণমাধ্যমের সংকটে কিছুটা হোঁচট খেলেও অদূর ভবিষ্যতে আমরা ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতায় কাঙ্খিত সাফল্যে পৌঁছাতে পারব বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশ সময়টা হল ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করি তারা নির্দিষ্ট কোন ফরমেটে কাজ করেন না। পত্রিকা অফিসগুলোতে আলাদা আলাদা বিট থাকে কিন্তু ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সব বিটের নিউজই করতে হয়। সেজন্য সাংবাদিকতা শেখার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে ক্যাম্পাসের সময়টা, এখানে সকল জায়গায় পারদর্শীতা অর্জনের সুযোগ থাকে। এই সুযোগটাই জবি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা নিয়েছে। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন থেকে শুরু করে সকল নিউজেই জবি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের রয়েছে অকল্পনীয় ভূমিকা।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় অনেক বাধার সম্মুক্ষিণ হতে হয়। আর চ্যালেঞ্জ বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি, ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বা কিছু অনিয়ম নিয়ে লিখলে বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। এই বাঁধা ও অসহযোগিতাই ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে ওঠার সময়। একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার, জীবনকে কোন পথে ধাবিত করবে সেই সময়টাতে যারা আমরা ক্যাম্পাস রিপোর্টিং এ যুক্ত, আমরা যদি সামনে ভালো ভবিষ্যৎ না দেখতে পারি তখন এই পেশা থেকে ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এগুলোই হচ্ছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জগেশ রায় বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করে জীবনটাকে আলাদা ভাবে উপভোগ করা যায়। আর এর মধ্যদিয়েই সবার সাথে মেলামেশা করা, অন্যকে বোঝানো এবং নতুন বিষয় জানা যায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব এমন একটা সংগঠন যেখান থেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা উপভোগ করা যায়।’

লেখক:
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *