ঝিনাইদহে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

ঝিনাইদহে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাগলাকানাই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীকের প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামীলীগের মিছিল মিটিংয়ে না থাকা, সক্রিয় রাজনীতি না করা সহ সদর পৌরসভার চেক জালিয়াতি’র অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান হিসাবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চানের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করা হয়।

আগামী ১৫ জুন ঝিনাইদহ সদর পৌর সভার পাশাপাশি পাগলা কানাই ও সুরাট ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মেয়াদ শেষ হলেও সীমানা জটিলতা নিয়ে স্থগিত ছিল এই পৌরসভা ও ইউনিয়নের নির্বাচন। নির্বাচনে পাগলাকানাই ইউনিয়নে ১৪ হাজার একশ ১৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এদিকে শনিবার বিকেলে শহরের পায়রা চত্বরে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একাংশ। এতে ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাসেম আলী, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী,৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন সহ কয়েকশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সেসময় পাগলাকানাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাসেম আলী বলেন, সদর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আওয়ামীলীগের কোন কর্মী না, তাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিয়ে মনোনীত করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি ও পৌরসভার অর্থ আত্মসাত্বের প্রমান মিলেছে । তাই এই মনোনয়ন বাতিল করে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে আবু সাইদ বিশ্বাসকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার আহবান জানান তারা।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুজ্জামান চান জানান, কে কি বিক্ষোভ করলো সেটা তাদের ব্যাপার। আমি ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। দল বুজে-শুনেই আমাকে নির্ভরযোগ্য প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, আমার বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির অভিযোগ সঠিক না। পোৗরসভার কিছু মানুষ স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্য আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। আমি এতো বোকা না যে, এই পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেবো। আমার অব্যাহতি পত্র গৃহিত হয়েছে কি না বিস্তারিত বলে বিপদ ডেকে আনতে চাই না।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়ারুল ইসলাম জানান, আসাদুজ্জামান চান প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যাহতি পত্র দিয়েছে। এটা ছুটির কারনে পাঠানো হয়নি। দ্রুতই এটা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পত্রটি গৃহিত হলেই তার অব্যাহতি চুড়ান্ত হবে। কেননা মন্ত্রনালয় ছাড়া পৌর সভা কোন কর্মকর্তা কে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দিতে পারে না। তবে সে চুড়ান্ত ভাবে অব্যহতি পত্রটি গ্রহন হলে কিংবা তার আগেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি পারবেনা সেটা রিটার্নিং কর্মকতাই ভালো বলতে পারবে। আর চেক জালিয়াতির বিষয়ে কিছুটা তথ্য তো সঠিক ছিলোই।

এ বিষয়ে পাগলা কানাই ইউনিয়নের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বরত শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার জুয়েল আহমেদ জানান, লাভজনক পদে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তবে বিষয়টি আমরা দেখবো মনোনয়ন পত্র দাখিলের পর। কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে যাচাই বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে তথ্য নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এমন অভিযোগের পরও আসাদুজ্জামান চানের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে পাগলা কানাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে দলীয় মনোনয়নের জন্য আসাদুজ্জামান চান, আবু সাইদ বিশ্বাস সহ চার জনের নাম কেন্দ্রে পাঠাই। সেখান থেকে মনোনয়ন বোর্ড বিভিন্ন মাধ্যমে তদন্ত করেই দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে। তারা জেনে বুঝেই করেছে। তবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে। কিন্তু সেটা চুড়ান্তভাবে প্রমানিত না হলে তাকে অপরাধী বলা সঠিক না।
জানা যায়, ঝিনাইদহ পৌরসভায় মেয়রের চোখ ফাঁকি দিয়ে পৌরসভার একটি চক্র ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কাজের বিপরীতে ৭৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। অনিয়মের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তদন্ত করে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পৌরসভার আভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ জুন থেকে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের বিপরীতে এই টাকা উত্তোলন করা হয়। ৩৭ টি কাজের বিপরীতে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকের ৩১৬ নং একাউন্ট ও ঝিনাইদহ জনতা ব্যাংকের ১৪২৫০৩ নং একাউন্ট থেকে এই টাকা উত্তোলন করা হয়।

ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু চেক জালিয়াতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ২০২১ সালের ২৭ জুন তার দপ্তরের ২৯৬ নং স্মারকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চাঁনকে অন্যত্রে বদলি ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (পৌর-১ শাখা) বরাবর চিঠি দেন।আসাদুজ্জামান চাঁন স্টোর কিপার হিসেবে চাকরীতে যোগ দিয়ে পরবর্তীতে প্রধান সহকারী ও পদোন্নতি পেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *