ঝিনাইদহে স্কুল থেকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রেবা খাতুন,প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে সহপাঠিদের সাথে স্কুলে আসেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আর বাড়ি ফিরে যাওয়া হয়নি তার। ২৮ মার্চ ২০২২ আনুমানিক বেলা ১১ টার দিকে স্কুল থেকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর অস্বুস্থ হয়ে পড়ে সে। এ কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু হয় তার। তবে আয়রন ট্যাবলেট নাকি শারীরিক অন্য অসুস্থতার কারনে তার মৃত্যু হয়েছে সেটি নিশ্চিত করতে পারেনি চিকিৎসকরা।

মৃত রেবা খাতুন সদর উপজেলার উত্তর সমশপুর গ্রামের সাগর হোসেনের মেয়ে এবং হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। এঘটনায় ফারজানা, আসমা, সুমাইয়া ও উর্মিলা নামের আরো চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিথিলা ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্কুল পড়ুয়া কিশোরী মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরনে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রতি সাত দিন পর পর এক জন শিক্ষার্থীকে একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে।

মৃত রেবা খাতুনের সহপাঠি জান্নাতুল জানায়, সকালে হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সকল শ্রেণীর ছাত্রীদের একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়াই শিক্ষকরা। এর কিছুক্ষণ পর ১১ টার দিকে রেবা হঠাৎ অস্বুস্থ হয়ে পড়ে, মুখ ও নাক দিয়ে গোগলা বের হতে থাকে। তখন আমরা বাজারের একটি ঔষধের দোকানে নিলে তারা দ্রুত সদর হাসপাতালে আনতে বলে। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেবা’কে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর সহপাঠি সামিন বলে, আমরা রেবা’কে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় কোন শিক্ষক ছিল না। তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ওকে নিয়ে কি করবো। এক পর্যায়ে দিশেহারা হয়েই হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে একজন সংবাদ কর্মী বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে রেবা’র বাড়ি ও স্কুলে জানায় যে তার মারা হয়েছে।

রেবা’র মা স্বপ্না বেগম জানান, আমার স্বামী দিনমজুর ও আমার দুই মেয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ে রেবা ও ছোট মেয়ে মুসলিমা খাতুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে স্কুলে যায় রেবা। এরপর স্কুল থেকে বলে মেয়ে একটি ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন স্কুলে ছুটে গিয়ে দেখি সেখানে মেয়ে নেই। পরে হাসপাতালে এসে দেখি আমার মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে বন্ধবীরা দাড়িয়ে আছে। তিনি আরো জানান, কি কারনে মেয়ের মৃত্যু হল এর সঠিক বিচার চাই আমি। ভালো মেয়ে স্কুলে গেল আর পেলাম মৃত অবস্থায়। এর পিছনে শিক্ষকদের কোন অবেহলা আছে কি না তা খুজে বের করে যেন দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়।

রেবা’র খালা সুমাইয়া জানান, রেবা বাড়ি থেকে না খেয়ে স্কুলে গিয়েছিল। তখন শিক্ষকরা একটি ট্যাবলেট খেতে বল্লে রেবা বলেছিল আমি খেয়ে আসিনি। তখন শিক্ষকরা বলে ট্যাবলেট খাও কিছু হবেনা। এই শিক্ষকদের গাফিলতিতেই রেবা আজ চিরদিনের মত হারিয়ে গেল। দোষী শিক্ষকদের যেন আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।

হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোছা: নাসিমা খাতুন জানান, আমাদের বলা হয়েছিল প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ট্যাবলেট খাওয়াতে। সে ভাবেই খাইয়েছি। এখানে আমাদের কোন গাফিলতি ছিল না। তবে কি কারনে সে মারা গেছে তা জানিনা।

সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা: আশরাফুজ্জামান সজীব জানান, মেয়েটিকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার মুখে ও নাকে গোগলা বের হচ্ছিল। ক্লিনিক্যাল কিছু স্যাম্পল পাওয়ার পরই বলা যাবে কেন তার মৃত্যু হয়েছে।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা: শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, সাধারনত আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে কেউ মারা যায় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে শুধু পেটে ব্যাথা কিংবা এ্যাসিডিটি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে সে আগে থেকে শারীরিক ভাবে অস্বুস্থ ছিল কি না সেটা খোজ খবর নিচ্ছি। তার মৃত্যুর সঠিক কারন জানতে ময়না তদন্ত করা হবে। তিনি আরো জানান, ঘটনার তদন্তের ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন অফিসের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ও ইউনিসেফের একজন প্রতিনিধি থাকবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *