টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাওয়া উৎসব

গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য মাছ ধরার বাওয়া উৎসব এখনও প্রচলিত। শীতের আগমনে কার্তিকের শেষ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সাধারণত এ বাওয়া উৎসব হয়ে থাকে।

এ সময় চারদিকে নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা-জলাশয়ে যখন পানি কমতে থাকে তখন এ বাওয়া হয়। পানি কমার ফলে মাছ আর উজাতে ও নামতে পারে না। তখনই মাছ ধরার উত্তম সময়। এই সময়ে উত্তর টাঙ্গাইলে সাধারণত এ বাওয়া বেশি হয়। মাছ ধরা যাদের নেশা ও পেশা তারা হাটবাজারে গিয়ে ঢাক-ঢোল- পিটিয়ে এবং মাইকিং করে দিন-তারিখ মতো শতশত মানুষ একযোগে উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরে থাকেন।

যার যা আছে জাল, জালি, শিপজাল, কারেন্ট জাল, ফারাংগি জাল, চাক-পলো, খাঁচা প্রভৃতি উপকরণ নিয়ে কোমরে গামছা বেঁধে নদী-নালা, খাল-বিলে নেমে পড়ে। এভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই সারিবদ্ধভাবে একসঙ্গে মাছ ধরাকে স্থানীয়ভাবে বাওয়া বলা হয়।

রোববার (১৫ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর বৈরান নদীতে এ বাওয়া উৎসব পালিত হয়। এ নদীতে মাছ ধরতে আসা আব্দুল বাছেদ মিয়া ও মো. আমজাদ হোসেনের চাক জালে বিরাট দুটি বোয়াল মাছ আটকে পড়ে। তারা বোয়াল দুটি জালে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আব্দুল বাছেদ মিয়া ও মো. আমজাদ হোসেনের মতো অনেকেই বোয়াল, রুই, কাতল, পাঙাস ও সিলভার কার্প, মিনার কার্পসহ বিভিন্ন মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরেন বাওয়াতরা। তবে বাছেদ মিয়ার আরেক সাথী আকাশ হোসেন বাড়ি ফিরছেন খালি হাতে। তার জালে কোনো মাছ ধরা পড়েনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাওয়াতদের কারও পলো বা জালে মাছ ধরা পড়লে সমস্বরে চলে শোরগোল। ফেরার পথে বাওয়াতরা তাদের জালে ধরা পড়া মাছ দেখিয়ে উচ্ছ্সা প্রকাশ করতেও দেখা যায়। সকাল থেকে তিন-চার ঘণ্টাব্যাপী বাওয়া উৎসবে ধরা পড়ছে বোয়াল, রুই, কালবাউশ, শোল, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে বোয়াইল ধরা পড়েছে বেশি।

উত্তর টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও মধুপুরের বিভন্ন গ্রামে খাল-বিল ও নদীতে বংশপরম্পারয় বাওয়া উৎসব প্রচালিত রয়েছে বলে জানিয়েছে ধনবাড়ী পৌর মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন।
তিনি বলেন, বাওয়াতের জালে বা পলোতে মাছ ধরা পড়ুক বা নাই পড়ুক, উৎসবমুখরতা গ্রামবাসীর বড় আনন্দ। আর এসব বাওয়াতের জাল ও পলোর শিকার মাছের স্বাদও আলাদা।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *