ডাকে ভিন্নতা; আবেদন একই

প্রতিকী ছবি

বাবা দিবস! প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক! বাবাকে ভালোবাসার জন্যে কী নির্দিষ্ট দিন লাগে? বাবা তো দিন নয়, প্রতিটি মুহুর্ত’ই সন্তানকে ভালোবাসার চাদরে আবদ্ধ করে রাখে। তাহলে কেন সন্তান বাবাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ দিন নির্বাচন করবে? সে প্রশ্নও খণ্ডনের যুক্তিবাচ্য মেলানো কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। এমন অধিক প্রশ্ন জড়ো করেও বাবা দিবসের জন্য বরাদ্দকৃত দিনটিকে এক পাশে রেখে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা! কেননা পৃথিবীর মানবকূল চায় দিনপঞ্জি’র একটা দিন বাবার জন্য রেখে দিতে, যেমনটা রাখা হয় মায়ের জন্য।

তাই আজ বাবা দিবস, শুধুই বাবার জন্য দিনটি। প্রতি ক্যালেন্ডারের জুন মাসের তৃতীয় রোববারটিই বাবার। ফলে ২০২০ তথা এই বছরের ২১ জুন হলো বাবা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৫২টি দেশে এ দিবসটি পালিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই সর্বপ্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে এ দিবস নিয়ে এতটা আগ্রহ দেখা যায়নি। কালের পরিক্রমায়, সংস্কৃতির পালাবদলে, মনুষ্য মনের ভাবাবেগে বাবা শব্দটির বিস্তৃতিই দিনটিকে গুরুত্ব এনে দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- প্রতিটি সন্তানদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অনুভূতিগুলো এক সুতোয় গেঁথে বাবার জন্য তৈরি হোক দায়বদ্ধতার মালা।

এরই প্রেক্ষিতে ১৯১৩ সালে মার্কিন সংসদে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালের দিকে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কলিজ বিলটিকে পূর্ণ সমর্থন দিলেও ১৯৬৬ সালে এসেই প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন ‘বাবা দিবস’কে ছুটির দিন ঘোষণা করে দিনটিকে গুরুত্ববহ করে তোলে।

ভাষাভাষীর দিক হতে বিশ্লেষণ করলে লক্ষণীয় যে, জার্মান ভাষায় বাবা শব্দটি হচ্ছে ‘ফ্যাট্যার’ আর ড্যানিশ ভাষায় ‘ফার’। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ বলা হয় বাবাকে। চীনারা বাবাকে ডাকেন ‘বা’ বলে। কানাডিয়ান ভাষায় বাবা হচ্ছেন ‘পাপা’ আর ক্রোয়েশিয়ান ভাষায় ‘ওটেক’। পর্তুগিজ ভাষায় বাবা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে বাবা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ ইংরেজি ভাষাতে। ইংরেজরা বাবাকে ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পাপা বলে ডাকেন। ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় বাবা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। হিব্রু ভাষায় বাবা হচ্ছে ‘আব্বাহ্‌’। হিন্দি ভাষার বাবা ডাকটি হলো ‘পিতাজী’। আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ‘বাপা’ কিংবা ‘আইয়্যাহ’। জাপানিরা তাদের ভাষায় বাবাকে ডাকেন ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকা হয়। হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় ‘পাপা’ ছাড়াও বাবা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। বিভিন্ন অঞ্চলে বাবাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হলেও ভালোবাসার আবেদনে নেই একটুও ভিন্নতা।সকলের কাছে মোহ সমন্বিত আবেদন আহ্লাদ ওই একই, বাবা।

ডাকের ভিন্নতার ন্যায় পালনের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্যময় এ দিবস। কিছু দেশে বাবাকে উপহার দেওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। আবার কিছু অঞ্চলে তা ছাড়িয়ে যায় সুনির্দিষ্ট অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে। বিশ্বে এ দিবস পালন করা ৫২ দেশের মাঝে বাংলাদেশ একটি। আমাদের দেশে খুব সাদামাটাভাবেই পালিত হয় দিবসটি। সচরাচর সন্তানেরা তাদের বাবাকে কোনো না কোনো উপহার দিতে খুব পছন্দ করে। তৎমধ্যে কেউ কেউ বিশেষ এই দিনটিকেই বেছে নেয় প্রিয় বাবাকে সম্মানিত করতে। মুলত আমাদের দেশে এ দিবস পালনের প্রাধান্য বিষয়টিই হলো বাবার জন্য বিশেষ দিনে বিশেষ উপহার।

সম্প্রতি বাবা দিবসটা বেশ কদর্যতা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাবার সঙ্গে ছবি তুলে সেটি ভার্চুয়ালি শেয়ার করাটা এ সময়ের একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে নিজের প্রোফাইল বা কাভার ছবিতে বাবাকে স্থান দিয়ে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ করে থাকে। পাশাপাশি বাবাকে নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করার মাধ্যমে বাবার কৃতিত্ব’র পসরা সাজিয়ে দিবসটিকে বাবাময় করে তোলে।

প্রকৃতপক্ষে বাবার ভালোবাসা শুধু বাবার মাঝেই তুল্য। সন্তানেরা সৌরজগতের এক একটি গ্রহ হলে, বাবারা হয় সূর্য। সকলেই সেই সূর্যের আলোয় আলোকিত। একদিন সন্তানেরাও সন্তান-সন্ততির অধিকারী হবে। তাই প্রতিটি সন্তানের অনুভূতি আর আচরণে তৈরি হোক বটবৃক্ষের ছাপ। বাবা’ই তো বটবৃক্ষ।

লেখক: বেলাল উদ্দিন বিল্লাল, গণমাধ্যম কর্মী

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *