তিন বিলা তিন মুঠো খাবার খাতি পারি , আমাগির কিসের ইদ

‘তিন বিলা তিন মুঠো খাবার খাতি পারি , আমাগির কিসের ইদ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে কপোতাক্ষ নদীর কুড়িকাহুনিয়ার বাঁধ ভাঙি আমাদের ঘর-বাড়ি সব ভাসায় নিয়ে গেছে। প্রথম কয়দিন রাস্তার ওপর গরু ছাগলের সাথে থাকতাম। দুই মাসের বেশি সময় পার হুয়ি গেছে। এখনও বাড়ির উঠানে জোয়ার-ভাটা চলতিছে। থাকার জায়গা নেই। অসুস্থ স্বামী আর দুই ছেলেকে নিয়ে কুড়িকাহুনিয়া মহিলা মাদ্রাসায় থাকি। রোজার মাসে ফিতরার কিছু টাকা পেয়েছিলাম। সেটা দিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করেছিলাম। রোজার ইদে কোনও কিছু জুটিনি। খাওয়া হয় না ঠিকমতো। কোনও বেলায় কিছু জুটলে কিছু খাই, না জুটলে পানি খেয়ে দিন কাটায়ে দেই। এই ইদেও মনে হয় না কিছু জোটবে। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিতে ভাসছে। অনেক চিষ্টা করিও বাঁধ দিতি পারিনি। আমাদের আবার কিসের ইদ। আমরা এতদিন ধরি পানিতে ভাসতিছ আমাগির কষ্ট কেউ দেখতি পায় না। বাথরুমে পর্যন্ত যাবার জায়গা নেই। বাথরুম করার জন্য সন্দি (সন্ধ্যা) পর্যন্ত অপেক্ষা করতি হয়। আপনারা ইদ করেন…’ কথাগুলো একদমে বলতে বলতে হাউমাউ করে কান্না শুরু করলেন আশাশুনির প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া এলাকার মঞ্জিলা খাতুন (৪৫)। শুধু মঞ্জিলা নয়, তার মতো একই অবস্থা অনেক পরিবারের।

আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা গ্রামের দিন মজুর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ দুই মাসের বেশি সুমায় (সময়) ধরি আমরা পানি ভাসতিছি (ভাসছি)। বাড়ি ঘর কিছু নেই। অনেক মানুষ এলাকা ছাড়ি চলি যাতিছে। ইদ তো আমাগির জন্যি না। চেয়ারম্যান মেম্বররা অল্প কিছু চাল, ডাল দেয় তাই খায়ি বাঁচি (বেঁচে) আছি। চারিদিন পানিতে ডুবুনে (ডুবে আছে) আবার করোনায় কাম-কাজ কিছু নেই। খায়ি না খায়ি কোনোরকম দিন কাটি যাতিছে। আমরা যে কি অসহায় জীবন যাপন করতিছ তা বলার ভাষা নেই। আগে কোরবানি ইদে গরুতে ভাগি হতাম। এবার ইদের সেমাই কিনতে পারিনি।

শ্যামনগর উপকূলের গাবুরা, পদ্মপুকুর এবং বুড়িগোয়ালিনী মানুষের মধ্যে ইদের আনন্দ নেই। উপকূলী মানুষ অধিকাংশ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। জুলাই থেকে বনে যাওয়া নিষেধ।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, সরকারিভাবে সুন্দরবনে মাছ শিকার বন্ধ আছে ১ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত। সরকারিভাবে এই জেলে বাওয়ালিদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে। যাদের জেলের কার্ড আছে তারাই কেবল চাল পেয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, করোনায় মানুষের কাজ নেই। কিছু সরকারি-বেসকারি সাহায্য পেয়েছে। মোবাইল নম্বর ভুল হওয়ায় কিছু বাকি আছে। তারপরও আমার ইউনিয়নে মানুষ বর্তমান সময় খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ইদুল আযহা সবাই পালন করলেও এই এলাকার মানুষের মনে ঈদ আনন্দ নেই।

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামের দুই চরের ২শ পরিবারের ভাগ্যেও জোটেনি এক টুকরো কোরবানির মাংস

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, ‘মাছের প্রজননের কারণে মাছ শিকার বন্ধ আছে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে সরকার এই জেলে বাওয়ালিদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল দিয়েছে। আমার ইউনিয়নের জেলে বাওয়ালিদের বর্তমান সময় খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুধু চাল দিচ্ছি।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মে মাসের ২০ তারিখে আঘাত হানলেও আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি আছে। এখানকার মানুষ কী কষ্টে আছে সেটা দেখার কেউ নেই। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ ৫ হাজার ৯৫০ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে সরকারি চাউল বিতরণ করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *