ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে একজনকে হত্যা ও একজন হাসপাতালে

ধর্ম অবমাননার গুজবে পুড়িয়ে হত্যা

ধর্ম অবমাননার গুজবে পুড়িয়ে হত্যা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে মসজিদে তর্কাতর্কির পর ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা ও দেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটগ্রামের বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি শহীদুন্নবী জুয়েল (৫০) রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম  জানান, শহীদুন্নবী জুয়েল ও তার সঙ্গী সুলতান জোবায়ের আব্বাস (৫১) বুড়িমারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় বাজার মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করতে যান। এই দুজনের বাড়িই রংপুরে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘শহীদুন্নবী মসজিদের সেলফ থেকে ধর্মীয় বই নিয়ে পড়তে যান। এ সময় তাক থেকে একটি কোরআন শরিফ নিচে পড়ে যায়। এতে কিছু মুসল্লির ধারণা হয়, ইচ্ছা করেই কোরআন শরিফ ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধর্ম অবমাননার গুজব আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে মানুষ মনে করেছে তারা কোরআন অবমাননা করেছে। কিন্তু এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। ওখানে ইউএনও, পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু তারা তাকে (শহীদুন্নবী) রক্ষা করতে পারেনি।’

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কয়েকজন মুসল্লি শহীদুন্নবী ও জোবায়েরকে উদ্ধার করে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে নিয়ে যান। এ সময় উত্তেজিত মুসল্লিরা বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করেন। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।

এক পর্যায়ে মুসল্লিদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল এসে ইউনিয়ন পরিষদের দরজা ভেঙে শহীদুন্নবীকে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বাইরে এনে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয়।

শহীদুন্নবীর সঙ্গে থাকা জোবায়েরকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

শহীদুন্নবী ও জোবায়ের কেন রংপুর থেকে লালমনিহাটে গিয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারণ সম্পর্কে এখনো জানতে পারিনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে যেখান থেকেই আসুক তারা তো যে কোনো মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেই পারে।’

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় বিতর্ক থেকে গুজব ছড়িয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ। জনতার হাতে আটক গুরুতর আহত সুলতান যোবায়েরকে পুলিশ হেফাজতে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।তবে গুজবে কান না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *