প্রতারক আইসিএল শফিকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

প্রতারক

প্রতারক

লাখ লাখ মানুষকে পথের ভিখারি বানানো ও হাজারো পরিবার ভাঙার খলনায়ক জামাতের রোকন প্রতারক আইসিএল শফিকের বিচারের দাবিতে মানবন্ধন করেছে গ্রাহকরা। 

শতাধিক মামলা, ২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও তিনটি সাজার দণ্ড নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া এমএলএম গডফাদার এমএনএইচ শফিকুর রহমান জামিন পেলেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। তার প্রতারণার শিকার লাখো মানুষের অসহায় আহাজারিতে জেলা, উপজেলা থেকে প্রত্যন্ত এলাকার বাতাসও ভারী হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বাংলামোটরের একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গত বুধবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে শফিকুর রহমান ঢাকাতেই আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় নিরাপদে থাকার জন্য তিনি উত্তরা, কাঁঠাল বাগান, বনানী, মগবাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও মিরপুর এলাকায় ৯টি ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন। এছাড়া দাড়ি রেখে লম্বা আলখেল্লা ও হাজী রুমাল পরিধান করেই চলাফেরা করতেন তিনি। ফলে প্রতারিত মানুষজন তাকে সামনা সামনি দেখেও চিনতে পারতেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতারক শফিকুর রহমান আইসিএল নামের একটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের এমডি থাকলেও তিনি আরসিএল, আইডিএল, এফআইসিএল, এফআইবিএল, প্রিভেইল, কনজারভেটিভ, মাল্টিভিশন, গ্লোবাল, প্রাইম, বন্ধন, নিউ মডেল, সেমা, ওয়াইডিসিএল, সিসিএল, এসডিসিএল, আরডিসিএল, রিলেশনসহ প্রায় ৪০টি এমএলএম কোম্পানির প্রধান উপদেষ্টা রয়েছেন। প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি নিয়মিত লাখ লাখ টাকা বখরা হাতিয়ে নিতেন।

বিভিন্ন গ্রাহকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইসিএল ও এর এমডি শফিকুর রহমানের ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামে। দুদকের উপপরিচালক নাসির উদ্দিনের প্রাথমিক অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে, আইসিএল এর ব্যানারে ১২ বছর যাবৎ ৭০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে সাত সহস্রাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ প্রতারণার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান ছাড়াও অপর ৯ জন পরিচালককে দায়ী করা হয়। পরিচালকরা বেশির ভাগই এমডির পরিবারের সদস্য কিংবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক হামিদুল হাসান এক দফা শফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তীতে হাজিরা দেওয়ার চিঠিও দেন। কিন্তু আত্মগোপনে থাকা শফিকুর রহমান আর কোনো সংস্থার তদন্ত কিংবা চিঠিকে পাত্তা দেননি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, লাখ লাখ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে আইসিএল এমডি শফিক দেশ বিদেশে বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পদ গড়েছেন। মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে তার রাজকীয় বাড়ি রয়েছে, সেখানকার নাগরিত্বও নিয়েছেন তিনি। এছাড়া নেপালের পোকরা এলাকায় তার বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর বিশাল বড় কমলার বাগানও গড়েছেন শফিক। যে কোনো মূল্যে তিনি জামিন নিতে পারলেই স্থায়ীভাবে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবেন বলে আশঙ্কা ক্ষতিগ্রস্তদের।

এদিকে সর্বস্বহারা মানুষজনের বুক চাপরানো আর্তনাদ শুনলে যে কারোর চোখ ভিজে উঠছে। কারো পেনশনের টাকা, কারো ব্যাংকে জমানো শেষ সম্বল, কেউবা নিজের শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে সমুদয় টাকা তুলে দিয়েছিলেন আইডিয়েল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (আইসিএল) কোষাগারে। শফিক সে টাকা জমা নিয়েই জানিয়েছিলেন আইসিএলের আমানত ও ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পে বিনিয়োগ হিসেবে গৃহীত টাকার লভ্যাংশ পাবেন ঘরে বসে বসেই। লোভনীয় লাভের প্রস্তাবে সবাই স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু লাভ দূরের কথা, বিনিয়োগের টাকাগুলোই যে শফিক গিলে খাবেন তার ঘূর্ণাক্ষরও টের পাননি কেউ।

কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান জামায়াতেরও রোকন পদে অধিষ্ঠিত হন। হরদম মুখে আল্লাহ রাসুল, ঈমান আমলের কথা বলে মানুষের মাঝে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ফন্দি আঁটেন তিনি।

কেউ জমি বিক্রি করে, কেউবা তিলে তিলে জমানো সব সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে চলতি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়েও জমা দিয়েছেন আইডিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে (আইসিএল)। অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আইসিএল। টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছেন এর মূল প্রতিষ্ঠান আইসিএল গ্রুপের কর্মকর্তারা। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে
প্রতিষ্ঠানটিতে যারা টাকা জমা দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। টাকা পাওয়ারও কোনো আশ্বাস নেই। প্রধান কার্যালয়সহ ৩৬টি শাখায় তালা লাগিয়ে লাপাত্তা হয়ে আছেন এর কর্মকর্তারা। এমন অবস্থায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এতে বিনিয়োগকারীরা।

আইসিএল গ্রুপের নাম সর্বস্ব ১৩টি প্রতিষ্ঠান ফেলে রেখেই উধাও হয়ে যান গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমানসহ পরিচালকরা। প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক তাদের সর্বস্ব খুইয়ে এখন দিশেহারা।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *