প্রথম দিনে নিরুত্তাপ ব্যাংকিং কার্যক্রম

রাজধানীর ব্যাংকপাড়ায় এমন চিত্রই দেখা গেছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে টানা দুই মাসের বেশি সময় পর আজ থেকে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে প্রথম দিন ব্যাংকগুলোতে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিতিও ছিল কম। ফলে অনেকটা ঢিলেঢালায় অবস্থায়ই চলেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি থাকলেও লেনদেনসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে চলেছে। যার কারণে আজকে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। অনেক ব্যাংকেই কর্মী উপস্থিতি কম। ঢিলেঢালা অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। এ সপ্তাহ এরকভাবেই চলবে। তবে যেহেতু ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যাংকগুলোতে ব্যস্ততা বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

এ বিষয়ে বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন বলেন, অন্যান্য দিনের মতো আজকেও স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। ছুটি না বাড়লেও তেমন চাপ দেখা যায়নি। তবে করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতে আমাদের নিজস্ব একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে দুটি গ্রুপে কাজ চালাচ্ছি। আমাদের প্রত্যেক শাখায় এখন ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করছে। বাকিরা ছুটিতে আছে। কাজের চাপ বাড়লে পর্যায়ক্রমে কর্মীসংখ্যা বাড়ানো হবে।

সোনালী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাধারণ ছুটি শেষ হলেও অনেকটা ঢিলেঢালা অবস্থায় লেনদনে হচ্ছে। গ্রাহকের তেমন চাপ নেই। সব ধরণের সেবা চালু আছে। সকাল থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যাংক চলছে। এ সপ্তাহ স্বাভাবিকই চলবে। ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সচল হলে আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যাংকগুলোতেও ব্যস্ততা বাড়বে বলে মনে করেন এ ব্যাংকার।

ব্যাবসার প্রয়োজনে রাজধানীর নবাবপুর শাখার এসসিসি ব্যাংকের টাকা তুলতে আসা আশরাফুল আলম নামে এক গ্রাহক জানান, নবাবপুর ইলেক্ট্রনিকসের দোকানের ম্যানেজারে দায়িত্বে আছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর আজকে দোকান খুলেছে। নতুন মালামাল কেনার জন্য নগদ টাকার লাগবে, তাই টাকা উঠাতে ব্যাংকে এসেছেন।

এসসিসি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকে স্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে। গ্রাহক উপস্থিতি আছে। তবে খুব একটা বেশি তা নয়। স্বাভাবিক সময়ের মতোই। করোনার বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কর্মীরা কাজ করছে বলেন তিনি জানান।

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর আজ থেকে পূর্বের সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত লেনদেন হয়। আর লেনদেন পরবর্তী ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শাখা ও প্রধান কার্যালয় খোলা থাকবে বিকাল ৬টা পর্যন্ত।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) স্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ায় এ নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপরভিশন বিভাগ।

স্বাভাবিক লেনদেন চালু হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণ পরিপালন করতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ঘোষিত করোনা সংক্রমিত মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত ব্যাংক শাখাসমূহ দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হবে। এক্ষেত্রে লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

এছাড়া সরকার কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশনা অনুসারে গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকাকালীন প্রয়োজনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে যাতায়াতের জন্য ব্যাংকের নিজ দায়িত্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অফিসের কর্মপরিবেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভাবা নারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত হতে বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

গ্রাহকের প্রয়োজনে নগদ-চেকের মাধ্যমে জমা-উত্তোলন, ডিডি, পে-অর্ডার ইস্যু, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় ভাতা-অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিটেন্সের অর্থ পরিশোধ, প্রণোদনাগুচ্ছের কার্যক্রম, যাবতীয় নিয়মাচার মেনে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ, পেমেন্ট সিস্টেমের আওতাধীন অন্য লেনদেন সুবিধা দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে এনআরবি বন্ড, বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়পত্রের লেনদেন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়।

অর্থসূচক
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *