বিশাল হাঁসের খামারের সফল উদ্যোক্তা সাংবাদিক ইমন

সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি অনেকেই ছোট বড় বিভিন্ন পরিসরে ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন। চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তা হওয়ার। দৈনিক ভোরের ডাকের স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরুল কাওসার ইমন গড়ে তুলেছেন বিশাল এক হাসের খামার এবং নিজেকে প্রমাণ করেছেন সফল একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসাবে।

নিজের এই খামার তৈরির পেছনের গল্প তুলে ধরেছেন ইমন নিজেই:

সেই ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম সাংবাদিক হবো। সেই চেষ্টাটা সব সময়ই ছিল। এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। ২০০৯ সালের শেষের দিকে দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়। সাংবাদিক হবার যুদ্ধটা সেই তখন থেকে আরো জোড়ালো হয়ে ওঠে। এরপর মাঠে-ঘাটে ছুটতেই থাকি। প্রতিদিনই পরিচয় হতে থাকে নতুন নতুন মানুষের সাথে। প্রতিটি মুহূর্তেই নতুন কিছু শেখার সুযোগ হয়। এরপর নিজের পরিশ্রম এবং সহকর্মীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের পর এক সফলতা পেতেই থাকি।

২০১৫ সালের দিকে বিভিন্ন ধরনের মানবিক ঘটনা ভেতরটা নাড়া দেয়। বিশেষ করে সারা জীবন সাংবাদিকতা করে যাওয়া অভিভাবক সুলভ কিছু সিনিয়র ভাইকে যখন জীবনের শেষ সময় চাকরি হারা অবস্থায় রাস্তায় ঘুড়তে দেখি! চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে এবং সংগঠনে আবেদন পত্র দিতে দেখি, তখন-ই ভেতরটা আৎতকে উঠে। মূহুর্তেই নিজের ভবিষ্যতটাও কল্পনা করা শুরু করে দিই। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি আমার শেষ সময়টাও কি এমন হবে? এভাবেই কিছু দিন ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করি।

ঠিক ওই সময় অভিভাবক সুলভ এক বড় ভাইয়ের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি। তিনি পরামর্শ দিলেন, ব্যবসা করো। ঠিক তখন থেকেই ব্যবসার ভূত মাথায় ঢুকে। নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে গুলিস্তানে একটি শার্ট তৈরির কারখানা শুরু করি। সে সময় লোক ছিল মোট তিন জন। অর্থ সংস্থান করতে না পারায় সেটি ধীরগতিতে এগুতে থাকে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৪০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ডের মালিকদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তাদের ব্র্যান্ডগুলোকে আরো বেশি হাইলাইটেড করতে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করতে থাকি। ক্রিকেট ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ শুরু করি। ওই সেক্টরে কাজ করা মানুষগুলোকে খুজে বের করে মাঠে এবং জার্সিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং করি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভালো সফলতা পাই।

এরপর এক জন বিশেষ মানুষের অনুপ্রেরণায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালু করি। নেপাল, ভূটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ আরো কয়েকটি দেশে নিজস্ব বিজনেস চেইন তৈরি করতে সক্ষম হই। সেখানেও কয়েক জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। সব কিছুই ঠিক-ঠাক চলতে থাকে। ব্যবসার মুনাফা থেকে কয়েকটি গাড়ি কিনে উবারে দিয়েছি। সেখানেও কয়েক জন মানুষের কর্মসংস্থার তৈরির সুযোগ পেয়েছি।

হাঁসের সার্বক্ষণিক সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত ঘড় নির্মাণ এবং ২৪ ঘণ্টাই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুপাতে এই ঘড়ের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা কমানোও ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন ঘড় পরিষ্কারের জন্য রয়েছে দু’জন মানুষ। তিন বেলা হাঁসকে খাবার দেয়া হয় পরিমান মতো। প্রতি চার মাস পর পর ডাক প্লেগ আর ডাক কলেরার ভ্যাক্সিন দেয়ার নিময় থাকলেও বারতি সুরক্ষা হিসেবে প্রতি দুই মাস পর পর এই ভ্যাক্সি দেয়া হচ্ছে। হাঁসগুলোর শারিরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি সপ্তাহে একজন ভ্যাটেনারি চিকিৎসক খামার ভিজিট করেন। প্রতি ১৪ দিন পর পর অভিজ্ঞ খামারিদের এখানে ভিজিট করানোর জন্য নিয়ে আসা হয়। তাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়া যায়।

মূলত করোনা ভাইরাস একটি শিক্ষা দিয়ে গেল। পৃথিবী যে এক ধাক্কায় স্থবির হয়ে যেতে পারে সেটি বুঝা গেল। দুঃসময়ের বন্ধু কৃষি, সেটিও মনে করিয়ে দিয়ে গেল মহামারি করোনা ভাইরাস। আমার খামারের ফেস-১ এটি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা ৫০০০ হাঁস পালনের। সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসার পরিসর আরো বাড়ানো এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আগামী ৩ বছরের মাধ্যে ফেস-২ এবং ফেস-৩ এর কাজও সম্পন্ন হবে।

গ্রামে খামার নির্মানের পেছনে মুনাফা ছাড়াও যে বিষয়টি আমার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তা হলো কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই সুযোগ সব মানুষের হয় না। পৃথিবীর কোনো কাজই ঝুঁকি মুক্ত এবং সহজ নয়। ব্যবসা করতে গেলে ঝুঁকি থাকবেই। সেই ঝুঁকি যারা কাটিয়ে উঠতে পারেন তারাই ভবিষ্যতের দিনগুলোতে সফলতা পান। আর যারা ঝুঁকি নিতে চান না, তাদের জন্য ব্যবসা নয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *