বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় টাঙ্গাইলে কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে আহত

টাঙ্গাইল ধনবাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কলেজ ছাত্রকে প্রেমিকার বাড়ীতে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে মেয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে।

আহত কলেজ ছাত্র বর্তমানে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রের মামা নজরুল ইসলাম ধনবাড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ধনবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) সৈকত  হাসান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর)  জানান, শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে কলেজ ছাত্রের মামা  নজরুল ইসলাম এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আহত কলেজ ছাত্র উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের বিল পাইস্কা গ্রামের মোঃ আপন মিয়ার ছেলে জিসান আহমেদ (১৭) এবং প্রেমিকা একই ইউনিয়েনের পাশ্ববর্তী দরিচন্দ বাড়ী গ্রামের আয়নাল হকের মেয়ে তানিয়া আক্তার (১৭)। ­আহত জিসান আহমেদ ধনবাড়ী সরকারী ডিগ্রী কলেজে ও  তানিয়া আক্তার মুশুদ্দি রেজিয়া কলেজের শিক্ষার্থী।

জিসান ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, জিসান ও তানিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তিন বছর আগে গড়ে উঠে। কিন্তু ছয় মাস আগে তাদের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যায়। কয়েক দিন আগে থেকে তানিয়া আমাকে নিয়মিত মেসেজ দিতে থাকে এবং দেখা করতে বলে।

শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর)  বিকালে তানিয়া আবার মেসেজ করে জানায় আমি তোমাকে অনেক দিন যাবত দেখিনা।  তোমাকে দেখতে মন চাচ্ছে এই বলে বারবার অনুরোধ করতে থাকে। তার অনুরোধ ওদের বাড়ীর সামনে দেখা করতে যায় জিসান। আগে থেকে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী তানিয়ার মা আম্বিয়া বেগম, বড় বোন জামাই আলমগীর হোসেন ও তার চাচাতে ভাই আলমগীর হোসেন          আল-আমিন জিসানকে জোর করে তুলে নিয়ে তানিয়ার রুমে আটকে রাখে এবং বিয়ে করতে বলে। আমি আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া বিয়ে  করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে বাঁশ ও কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওদের ঘর থেকে উদ্ধার করে এবং আমার বাড়ীতে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমার বাড়ীর লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় আমায় উদ্ধার করে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার কাছে থাকা  নগদ ২০ হাজার টাকা ও একটি সাদা কাগজে তানিয়ার পরিবার স্বাক্ষর নেয়।

জিসান আরও জানান, আমি তানিয়ার কথা পরিবারের লোকজনের কাছে বলেছিলাম। তানিয়ার কথা শুনে আমার বাবা তানিয়ার সাথে সম্পর্ক না রাখার জন্য বলে। তানিয়ার বাবা ৬ টি বিয়ে করেছিলো। আমি সে বিষয়টি জানার পর থেকেই তানিয়ার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।

জিসানের খালা জানান, মেয়েটির পরিবারের লোকজন বাজে প্রকৃতির। তারা মামলাবাজ এলাকার অনেক নিরিহ লোকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। জিসানদের সম্পত্তি দেখে তার মেয়েকে আবারও যোগাযোগ করতে বলে। এ ঘটনায় আমি সবার কাছে বিচার দাবি জানাই।

মেয়ের পরিবারের নিকট এ ঘটনা জানতে চাইলে, পাইস্কা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ আত্মীয়র সুবাদে খবর পেয়ে  ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের সাথে মেয়ের পরিবারকে কাউকে কথা বলতে দেন নি। বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় ফুলবাড়ী গ্রামের নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন জানান, মজিদ মেম্বার লোক হিসাবে ভালো না। মজিদ মেম্বার তার এলাকার সরকারী গাছ রাতে চুরি করে কেটে মামলার আসামী ছিলেন। মেয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগও রয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের পরিবারের লোকজনকে আইনি আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীও জানান তারা।

এ ঘটনায় মেয়ের বাড়ীর পাশের লোকজন জানান, মেয়েটি অনেক চঞ্চল প্রকৃতির। তাছাড়া তানিয়ার পরিবারের সদস্যরা সুবিধাজনক নয়। সবাইকে সব সময় বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।

এ ব্যাপরে পাইস্কা ইউনিয়নের স্থানীয়  ৪নং ওয়ার্ড দরিচন্দ্র বাড়ী ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, আমি তিন-চার দিন যাবত একটি কাজের জন্য বাইরে আছি। এ সম্পর্কে কেউ আমায় অবগত করেনি।  এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ধনবাড়ী থানার এসআই গোলাম কিবরিয়া রোববার জানান, তদন্তে যেয়ে মেয়ে, মেয়ের মা আম্বিয়া বেগম, বাবা আয়নাল হকের  সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কেউ কথা বলতে চায় নি। মজিদ মেম্বার মেয়ের পরিবারের লোকজনকে অনুমতি দিলে তারা ঘটনাটি অস্বীকার করেন। এলাকাবাসী জানান, মজিদ মেম্বার তাদের কেমন যেন আত্মীয় হয়। তার সুবাদে তানিয়াদের বাড়ীতে আসা-যাওয়া করেন।

ধনবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) সৈকত হাসান রোববার দুপুরে জানান, এ ঘটনায় শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর)  রাতে উভয় পক্ষের সম্মাতিক্রমে ঘটনাটি মিমাংসা করা হয়েছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *