ব্যাংকগুলোতে ভিড়, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যেও লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছে মানুষ। সামনে ইদ। খুলেছে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। ফলে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে ব্যাপক হারে। লেনদেনের সময় সীমিত হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ভিড়ও হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন গ্রাহকদের পাশাপাশি ব্যাংককর্মীরাও। স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে ব্যাংককর্মকর্তাদের। এজন্য পরিস্থিতি বিচেনায় সবার স্বার্থে সীমিত নয়, স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা উচিত বলছেন গ্রাহক ও ব্যবসায়ীরা। গতকাল (সোমবার) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছেন তারা। ইদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক খরচ, বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকে যাচ্ছেন তারা। আর লেনদেনের সময় কমিয়ে আনার কারণে চাপ বাড়ছে।

মতিঝিলে উত্তরা ব্যাংকের লোকাল ব্রাঞ্চের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কামরুন্নাহার জানান, বেলা ১১টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। করোনার ঝুঁকি নিয়ে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ব্যাংকের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ব্যাংকাররা কাজ করছেন কচ্ছপের গতিতে। ভেতর থেকে বলছে লোক কম তাই সময় বেশি লাগছে। কিন্তু আমরা ভোগান্তিতে আছি। টাকা তুলতে এসে দিন পার হচ্ছে। তার মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তো রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা বলেন, একটি ব্রাঞ্চে সর্বোচ্চ পাঁচজন কর্মকর্তা অফিস করছেন। ছোট ব্রাঞ্চে তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। অনেক ব্যাঞ্চ আবার সপ্তাহে মাত্র এক দিন বা দুই দিন খোলা। তাই যেসব শাখা খোলা আছে ওই শাখায় সব গ্রাহকের ভিড় হচ্ছে।

তিনি বলেন, সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে ঈদের সময়ে এই সার্ভিস দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রাহকরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। একইসঙ্গে গ্রাহকদের ভোগান্তি দেখে খারাপ লাগছে। তাই এই সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংখ্যা আরো বাড়ানো উচিত।

সূত্র মতে, ইদকেন্দ্রিক মানুষের ব্যাংক থেকে ব্যাপক অর্থ উত্তোলন এবং আমানত রাখার পরিমাণ বেড়েছে। করোনার মধ্যেও কষ্ট করে হলেও রোজার মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যা অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। এতে দেশে বেড়েছে অর্থের প্রবাহ। কিন্তু এই সময়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার অন্যতম নাম ব্যাংকিং খাত গ্রাহকদের হতাশ করেছে। পাচ্ছেন না স্বাভাবিক সেবা। অথচ অন্যান্য ইদের আগে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্তও ব্যাংক খোলা রাখতে হতো। একইসঙ্গে ছুটির দিনেও ব্যাংক খোলা রাখা হয়।

বর্তমানে গত প্রায় দুই মাস ধরে সীমিত পরিসের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রুটিন কাজ টাকা দেয়া-নেয়ায় ব্যস্ত আছেন ব্যাংকাররা। তাও আবার সীমিত সংখ্যক কর্মচারী এবং অধিকাংশ শাখাই বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বেড়েছে গ্রাহকদের ভোগান্তি।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ব্যাংক সীমিত পরিসরে খোলা রাখা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এতে শুধু বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতাই নয়; গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ শাখা কম খোলা থাকায় সবাই নির্দিষ্ট শাখায় ভিড় করছে। এতে গ্রাহক ভোগান্তির পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের কর্মকতারা আগে থেকেই যথেষ্ট জায়গা নিয়ে বসেন। তাদের ব্যাকিং কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ আছে। যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের আগে অর্থনীতি সচলে এবং দেশের স্বার্থে সব ব্যাংকের শাখা খুলে দেয়া দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১০ মে থেকে দৈনিক ব্যাংকিং লেনদেন সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলছে। এর মধ্যে বেলা ১টা ১৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি রয়েছে। আর লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শাখা ও প্রধান কার্যালয় বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *