বয়স্ক-বিধবা ভাতা আত্মসাৎ: এক কেজি মাংস দিয়েই শোধ

একাধিক ব্যক্তির বয়স্ক-বিধবা ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তি কৌশলে ২০/২৫ জনের ভাতা উত্তোলন করে নিয়েছেন। আজ-কাল করেও ভাতার টাকা দেননি। কাউকে বা ৫০০ টাকার ১ কেজি মাংস কিনে দিয়েই করেছেন দায় শোধ।

সোমবার (৬ জুলাই) দুপুরে তিনজন ভুক্তভোগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, বয়স্ক, বিধবা ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে সরকার সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নামে একটি প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পের আওতায় ভাতাভুক্তদের তালিকা প্রণয়ন করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হিসেবে প্রতি ৩মাস পর পর তাদের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হয়। টাকা উত্তোলনের হিসেব রাখতে সুবিধাভোগীদের প্রত্যেককে একটি করে বই প্রদান করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়।

করোনা কালীন করোনা সংক্রামন রোধে ব্যাংকের পরিবর্তে সকল ভাতা ভোগী ব্যাক্তিকে এপ্রিল-জুন মাসের ভাতা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইউপি সদস্যরা বহি সংগ্রহ করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বিতরণ করেন। উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম তার ওয়ার্ডের সকলের বহি সংগ্রহ করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেও ১৫/২০জনের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বহি দিলেও টাকা আজ কাল বলে বিলম্ব করছেন ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম।

আত্নসাৎ করা অর্থ ফেরত চাইলে কাউকে আংশিক, কাউকে এক কেজি মাংস কিনে দেন এবং ১৫/২০ জনকে কিছুই দেননি ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম। এ টাকার জন্য ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে মৌখিক অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষতিতে চেয়ারম্যান ভুক্তভোগীদের টাকা পৌছে দিতে ইউপি সদস্য রফিকুলকে নির্দেশ দিলেও কোন কাজ হয়নি।

টাকা না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন এসব মানুষ। এদের মধ্যে ওই ওয়ার্ডের আফতাব উদ্দিন দুলাল, শৈলবালা ও দেবন্দ্রনাথ নামে তিনজন ভুক্তভুগি তাদের আত্নসাৎকৃত অর্থ ফেরত এবং বিচার চেয়ে  সোমবার (৬ জুলাই) আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

সনেকা বেওয়া বলেন, স্বামী অনেক আগে মারা গেছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঝিয়ের কাজ করে ও সরকারের দেয়া বিধবা ভাতার টাকায় কোনমতে সংসার চলছে। গত তিন মাসের টাকা রফিকুল মেম্বর তুলে নিয়েছেন। অনেকদিন তার পিছনে ঘুরার পরে একদিন ৫০০ টাকার এক কেজি মাংস কিনে দিয়ে টাকা শোধ বলে জানায়।

অপর ভুক্তভুগী আফতাব উদ্দিন দুলাল বলেন, বুড়ো মানুষ কষ্ট করে ছেলের সংসারে চলি। ভাতার টাকা ছেলের হাতে দিয়ে ওষুধ কিনে খাই। ব্যাংক বলেছে ৩মাসের টাকা না কি মেম্বর তুলে নিয়েছে। মেম্বরের(ইউপি সদস্য) কাছে চাইলে দেই দিব দিচ্ছি বলে আর দেয় নাই। গরীব মানুষ কার কাছে যাই?

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন: সাভারে গ্যাস দেওয়ার নামে চলছে প্রতারণা

তবে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, কয়েকজন ভাতাভোগী আমার কাছে এমন অভিযোগ করেছিল। যার প্রেক্ষতিতে ওই সদস্য রফিকুল ইসলামকে টাকা পরিশোধ করতে বলেছি। তিনি পরিশোধ করতে চেয়েও তা করেননি।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন মন্ডল বলেন, ব্যক্তি বা নমিনী ছাড়া অন্য কাউকে ভাতার অর্থ প্রদান করার নিয়ম নেই। ব্যাংকে কিভাবে ইউপি সদস্যদের হাতে টাকা প্রদান করেছেন? এ নিয়ে ভেলাবাড়ি কৃষি ব্যাংক কার্যালয়কে শোকজ পত্র পাঠানো হয়েছে। এমন অভিযোগ শুধু সারপুকুরে নয়, ভেলাবাড়ি ইউনিয়নেও রয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *