ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় মামুনুল ও বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মামলা

ভাস্কর্য
ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য
ছবি: সংগৃহিত

ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। 

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলাটি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বেলা ১১টার দিকে মামলা গ্রহণের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

মামলার আসামি মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে।’

একইদিন আসামি সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক, কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।’

আসামি মোহাম্মদ জোনায়েদ ওরফে জোনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারীতে বলেন, ‘মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো ভাস্কর্য থাকতে পারে না।’ তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ওই ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।’

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন আগে মৌলবাদী অপশক্তি মামুনুল হক ও ফয়জুল করিম কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যা দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ।

এর আগে গত শনিবার মঞ্চের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে মামলা দায়েরের কথা জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটাক্ষ ও অবমাননা করে মামুনুল গংরা প্রকাশ্যে বড় বড় গলায় কথা বলছে। মৌলবাদী অপশক্তিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ বলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির সমূহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আরও পড়ুন: বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই করলো ভুটান-বাংলাদেশ

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতের আঁধারে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত স্থানীয় মাদরাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা.) মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০) এবং শিক্ষক আল-আমিন (২৭) ও ইউসুফ আলী (২৬)।

গ্রেপ্তার দুই মাদরাসাছাত্র পুলিশকে জানিয়েছেন, ইসলামি বক্তা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *